সালটা ছিল ১৯২১, বিজ্ঞানের প্রথম সুপার স্টার আইনস্টাইনের নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, আইনস্টাইনও পৃথিবীর নানা জায়গায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, অনেকটা যেন পৃথিবী ভ্রমণ। যেখানেই তিনি গিয়েছিলেন তাঁকে শোণার জন্যে, দেখার জন্যে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করতো – এক theoretical physicist এর ভাষণ শোণার জন্যে যা সচরাচর দেখা যায় না। আইনস্টাইন সত্যিই এক বিস্ময় ছিলেন।
এদিকে, যতই তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ছিল, বিজ্ঞানী সমাজ তাঁকে ভুল প্রমানের জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিল। আইনস্টাইনের থিয়োরি ভুল – এই বলে অনেকে পেপারও ছাপিয়েছিল। অনেকেই তখন আইনস্টাইনের থিয়োরিকে ভুল প্রমান করার জন্যে পরবর্তী পূর্ণ সূর্যগ্রহনের (September 21, 1922) অপেক্ষা করছিল। Campbell আবার সুযোগ পেলেন -এবার তিনি, সূর্য গ্রহণ দেখার আরও আধুনিক যন্ত্রপাতি খুব যত্ন সহকারে তৈরি রাখলেন – এই সুযোগ তিনি কিছুতেই হাতছাড়া হতে দিতে চান না।
কিন্তু, এবার এই সূর্য গ্রহণ অভিযানে Campbell একা নন, আরও সাতটে দল, আলাদা আলাদা ভাবে এই সূর্য গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবে। যাদের মধ্যে ব্রিটিশ John Evershed এর দল যারা ভারতবর্ষ থেকে গিয়েছিল তারা আছে, অস্ট্রেলিয়ানরা আছে, আছে ক্যানাডিয়ানরাও। আবার Erwin Finlay-Freundlich ও আছে – যে কিনা আইনস্টাইনের থিয়োরি প্রমানের জন্যে বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাশিয়া গিয়েছিল, যুদ্ধ শুরু হওয়ায় রাশিয়ার জেলে যুদ্ধ বন্দী ছিল, যুদ্ধের পরে অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র তটে Erwin Finlay-Freundlich এর প্রথম সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ। – আইনস্টাইনের থিয়োরি প্রমানের জন্যে যেন এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল।
পূর্ণ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে আইনস্টাইনের থিয়োরিকে প্রমানের চেষ্টা Campbell এর জন্যে তৃতীয় বার – তাই Campbell অনেক ভালো ভাবে তৈরি হয়ে এসেছিলেন, তাঁর তোলা পূর্ণ সূর্য গ্রহনের ফোটো গুলোই কিন্তু আইনস্টাইনের থিয়োরিকে আরও স্পষ্ট ভাবে প্রমান করল। সেই একই আলোর deflection দেখা গেল, যা আগেই দেখা গিয়েছিল – যে deflection আইনস্টাইনের জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটিকে আরও ভালো ভাবে প্রমান করল। অবশেষে, Campbell সফল হলেন, বিজ্ঞানের এক নতুন পথ খুলে গেল। Campbell , প্রথমেই আইনস্টাইনকে তাঁর তোলা সূর্য গ্রহনের রেজাল্ট গুলো পাঠালেন – আইনস্টাইন সঠিক। সঠিক ছিলেন ব্রিটেনের Eddington ও।
তারপর, পরবর্তী কালে Campbell ও Eddington মিলে যুগ্ম ভাবে আরও কাজ করেছিলেন। ওরা তাঁদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখলেন – সত্যিই সূর্যের কাছে এসে স্পেস বেঁকে যায় – প্রকৃতি, মহাবিশ্বকে দেখার এক সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম হল। আইনস্টাইনের থিয়োরি আরও ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল।
আইনস্টাইনের অদ্ভুত থিয়োরি যতই অদ্ভুত হোক না কেন, আমাদের জীবন যাপনের সঙ্গে কিন্তু অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে – মহাবিশ্বের সত্যের কাছে কোন ভুল যুক্তি তর্কই টেঁকে না। আইনস্টাইন যে চোখে মহাবিশ্বকে প্রথম দেখেছিলেন সে ছিল চরম এক সত্য – আর সেই সত্যকে প্রমান করতে প্রায় পনেরো বছর সময় লেগেছিল। আর প্রায় আড়াইশো বছরের বিজ্ঞানের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়ে প্রকৃতি আইনস্টাইনকেই বিজয়ী ঘোষণা করেছিল।
কিন্তু, মানুষ তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করতে অনেক দেরি করেছিল – নোবেল কমিটি পর পর তিন বার তাঁর নোবেল প্রাইজ খারিজ করে দিয়েছিল – কারণ তারা তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্ব মেনে নিতে পারে নি। তবে, তাঁর photoelectric effect , থিয়োরি, যা কিনা কোয়ান্টাম ফিজিক্সের দরজা খুলে দিয়েছিল, সেই থিয়োরির জন্যে নোবেল কমিটি নোবেল প্রাইজ দিতে দ্বিধা করে নি।
চলবে