There are only two ways to live your life. One is as though nothing is a miracle. The other is as though everything is a miracle. – Albert Einstein
তারপর, পৃথিবী আরও একটা বীভৎস যুদ্ধ দেখল, আবার পৃথিবী ধীরে ধীরে যুদ্ধের বীভৎসতা থেকে বের হয়ে এক বিজ্ঞানীর বুদ্ধিমত্তার আশ্চর্য মহিমায় মুগ্ধও হলো – আইনস্টাইন এক বিশ্ব আলোচনার বিষয় হয়ে উঠলেন।
সেই সময়ের ইউরোপ, যার স্মৃতিতে এক বিধ্বংসী যুদ্ধের করুণ ছবি রয়ে গেল, যেখানে যুদ্ধ পরবর্তী শান্তির কথা বলতে গেলে, হিংস্রতার কথাই ফিরে ফিরে আসছিল। সেখানে, প্রথম থেকেই যুদ্ধ বিরোধী এক বিজ্ঞানী, যার একমাথা এলোমেলো কাঁচাপাকা চুল, চোখে সুদূর প্রসারি গভীর দৃষ্টি – যার কথা বলতে গিয়ে আমেরিকান, ব্রিটিশ, জার্মান, ফরাসী সবাইকে এক জায়গায় মিলিত হতে হয়, যার কাজকে প্রমান করতে ও বুঝেতে গেলেও সমগ্র বিশ্বের বুদ্ধিজীবীদের একত্রিত হতে হয়, যার মহাবিশ্ব নিয়ে ভাবনা ও দৃষ্টি ভঙ্গি যুদ্ধের বীভৎসতাকেও আবছা করে দেয়, ফিকে করে দেয় – তাঁকে মানুষ আপন করে নেবে না তো, কাকে নেবে? আর সেখানেই আইনস্টাইনের জয় – শুধু বৈজ্ঞানিক হিসাবে নয়, এক মানুষ হিসাবেও তিনি সম্বৃদ্ধ। তিনি তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের দেখিয়ে দিয়েছিলেন সত্যিকারের মানবতা কি করতে পারে।
এ হল তাঁর গল্প, যার বৈজ্ঞানিক সত্ত্বা পৃথিবীর সনাতন বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাকে উলট পালট করে দিয়েছিল, যিনি একাই, শুধু তাঁর চিন্তা, কাগজ ও পেন্সিল দিয়ে এক অদ্ভুত আবিষ্কার করে দিয়ে মানুষের চিন্তার জগতে এক অদ্ভুত আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁকে নিয়ে সাধারণ মানুষ, ঠিক যেমন করে একটা সিনেমা বা মিউজিক নিয়ে আলোচনা করে, ঠিক তেমন করেই আলোচনা করতো, তাঁর গল্প শুনত।
আইনস্টাইন বলেছিলেন – মানুষ রহস্য ভালোবাসে। রহস্য নিয়ে ভাবতে ভালোবাসে।
আর তিনি সেই রহস্য দেখতে পেতেন, যা কিনা কেউই দেখতে পায় না, তিনি তা কল্পনা করতে পারতেন, যা কেউই কল্পনা করতে পারে না। আর তাইতো, আইনস্টাইনের চোখ দিয়ে, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, চিন্তা দিয়ে মানুষ মহাবিশ্বের সেই রহস্যকে জানতে চেয়েছে। একা ঐ মানুষটির কাছেই মহাবিশ্ব তাঁর রহস্য ও রহস্যের সমাধান মেলে ধরেছিল। তাঁর চোখ দিয়েই মানুষ মহাবিশ্বকে দেখেছিল।
আইনস্টাইনের জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি মানব মস্তিষ্কের সবচেয়ে সুন্দর এক থিয়োরি। আজকের আধুনিক সমাজের সমস্ত বিজ্ঞানেও আইনস্টাইনের অবদান অনস্বীকার্য – সে লেজার বীম, টেলিকমুনিকেশন, স্যাটেলাইট থেকে শুরু করে ব্ল্যাক হোল, নিউট্রন স্টার, এমনকি বিগ ব্যাং – সমস্ত কিছুর বিজ্ঞানকে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করতে গেলে, আইনস্টাইনের জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটির সাহায্য নিতেই হয় – আজকের বিজ্ঞানীদের ভাষায় আইনস্টাইনের জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি – it’s beautiful, simple and profound , এবং সমগ্র মহাবিশ্বও তাই।
১৯৫৫ সালে ছিয়াত্তর বছর বয়সে আইনস্টাইন দেহত্যাগ করেন – কিন্তু, তাঁর মৃত্যুর ষাট বছর পরেও আইনস্টাইন ও তাঁর মারাত্মক জটিল থিয়োরি আজও মানুষের কল্পনা শক্তির পরীক্ষা নেয়, মানুষকে গভীর ভাবায়, প্রেরণা দেয়।
দেখা যায়, গত একশো বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বার বার আইনস্টাইনের ভুল খোঁজার চেষ্টা করে চলেছে, আইনস্টাইনের থিয়োরিকে ভুল প্রমান করার দুরাশা করেছে, চেষ্টা করেছে – কিন্তু, বারবারই আইনস্টাইন সঠিক প্রমানিত হয়েছেন। প্রকৃতি আইনস্টাইনের প্রত্যেকটি থিয়োরির সঙ্গে আশ্চর্য ভাবে সহমত ছিল।
তারপর যখন ১৯১৬ সালেই তিনি অংক কষে দেখেছিলেন – দুই ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষে ও মিলনে আলো নয়, Gravitational waves এর উৎপত্তি হয়, আর তা স্পেস টাইমে প্রসারিত হয়, সেই অনুমানের সত্যতা যখন একশো বছর পরে পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রমাণ হয়, সত্য ধরা দেয় – তখন আজকের মানুষের আশ্চর্য হওয়া ছাড়া আর অন্য কোন পথ থাকে না। আবার আইনস্টাইন সঠিক প্রমান হন। বার বার সঠিক প্রমান হন।
তিনি ছিলেন সেই মানুষ – যিনি তাঁর মানসিক শক্তি দিয়ে, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষের সমস্ত মানসিক দৈন্যতার উর্ধে পৌঁছে ছিলেন, যুদ্ধকালীন সময়েও সমস্ত যুদ্ধ-গ্লানি, ক্ষুধা সব কিছুর উর্ধে উঠে – মানব সভ্যতার এক মহান ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন।
একা এক ঘরে বসে শুধু কাগজ, কলম ও মন নিয়ে চিন্তা করে কি করা যায়, প্রকৃতির অসীম রহস্যকে ছোঁয়া যায়, মানব কল্যাণে প্রকৃতির শক্তিকে ব্যবহার করা যায়, মানুষের ভবিষ্যৎকে আরও সরল করা যায়, সহজ করা যায়, তারই এক আশ্চর্য নমুনা আইনস্টাইন ও তার কাজ – যা আজও মানুষকে প্রেরণা দেয়, ভাবায়। তাই, আইনস্টাইন এই শতাব্দীরও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত নায়ক ।
শেষ