দানিয়ুবের রূপ (The Danube)

না ‘আমি গঙ্গার থেকে মিসিসিপি হয়ে ভল্গার রূপ’ – দেখতে যেতে পারিনি, কিন্তু, গঙ্গার থেকে সিয়েন হয়ে দানিয়ুবের রূপ দেখার সুযোগ হয়েছে। দেখেছি মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের এই মহান নদীর উদারতাকে, বিস্তীর্ণতাকে – দানিয়ুবকে প্রথম দেখি বুদাপেস্টে, দেখি বিস্তীর্ণ দানিয়ুব বুদা ও পেস্টের জনবসতিকে ছুঁয়ে কেমন ধীর গতিতে বয়ে চলেছে। সেখানে, দেখেছি প্রাচীন নদী কেন্দ্রিক সভ্যতার এক আধুনিক রূপ।

আবার দানিয়ুবের সঙ্গে দেখা হয়েছে ব্রাতিস্লাভায়, শেষ বিকেলে ব্রাতিস্লাভা ক্যাসলের প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে দানিয়ুব ও তার উদার বিস্তীর্ণতাকে দেখে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া তো অন্য কোন উপায় ছিল না। আবার ভিয়েনায় ঢোকার মুখে দানিয়ুবের উপর দিয়েই আমাদের যেতে হয়েছিল।

ইউরোপে, নদীর রানী দানিয়ুব। ইউরোপের হৃদয়কে যেমন ভাগ করে বয়ে চলেছে, আবার তেমনি জুড়েছে। ইউরোপের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়েই এই নদীর বয়ে চলা, বিস্তার।

দানিয়ুবের তীরে মানুষের ব্যবসা ও বসবাসের ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের পুরনো। তাই, এই নদী ও নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা মানুষকে যুগ যুগ ধরে আকর্ষণ করে গেছে। পৃথিবীর অন্য কোন নদীকে ঘিরে এতো সম্বৃদ্ধ অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস বোধহয় নেই। আবার, ইউরোপের দশটা দেশ জুড়ে বয়ে চলা এই নদী ও তার জলকে ঘিরে বিতর্কও কম নেই।

দশটা দেশ, ও চারটে জমজমাট রাজধানী শহর – বেলগ্রেড, বুদাপেস্ট, ব্রাতিস্লাভা ও ভিয়েনা জুড়ে বয়ে চলা এই নদী পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ আন্তর্জাতিক নদী।

জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট থেকে শুরু হয়ে ব্ল্যাক সি তে জল নিয়ে যেতে দানিয়ুবকে প্রায় দু’হাজার কিলোমিটারের কাছাকাছি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আর, সেই দীর্ঘ পথে তাকে, কত শহর, কত বন-জঙ্গল, পাহাড় পার হতে হয়েছে, কতো প্রাণীকুল, জীবজগৎ, মাছ এই নদীকে ঘিরে বেড়ে উঠেছে। বেড়ে উঠেছে মানুষ ও তার সভ্যতা।

আবার দানিয়ুব পথে অনেক উপনদী, ভাসমান নদী দ্বীপ, ব-দ্বীপ, জলাশয়, লেক তৈরি করেছে – যেখানে স্থান পেয়েছে লক্ষ পাখি, জীবজন্তু, গড়ে উঠেছে দানিয়ুবের নিজস্ব এক ওয়াইল্ড লাইফ – তাই অনেকে দানিয়ুবকে আদর করে ইউরোপের অ্যামাজন নদীও বলে। আর আলপাইন তুষার গলা জল, দানিয়ুবকে সমৃদ্ধ করেছে, বিস্তীর্ণ করেছে, করেছে গভীর, উদার।

আবার এই দানিয়ুবে বয়ে যাওয়া জল ও তার ভাগাভাগি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচুর আইনি জল ঘোলা হয়েছে। এবং সেই সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টায় দানিয়ুবের বুকে গড়ে উঠেছে ড্যাম, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

ব্রাতিস্লাভা থেকে কিছু দূরে কংক্রিট ও ষ্টীল দিয়ে দানিয়ুবের উত্তাল জলরাশিকে বেঁধে ফেলার চেষ্টায় তৈরি হয়েছে ড্যাম ‘Gabčíkovo’। ইউরোপের সবচেয়ে বিতর্কিত ড্যাম ‘Gabčíkovo’, সেখানে দানিয়ুবের জল মেপে মেপে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়।

সেই Gabčíkovo Dam এর জন্যেই নাকি দানিয়ুব বেশ কয়েক কিলোমিটার অস্বাভাবিক রকমের সরলরেখায় বয়েছে। কিন্তু, দানিয়ুব বেশি দূর ঐ সরলরেখায় চলতে জানে না, আবার আপন মনে বাঁক নিয়েছে, জীবন দিয়েছে, আপন মনে বিস্তার করেছে, গভীর হয়েছে, বন্যায় দু’কূল ভাসিয়েছে, আপন মনেই গতিপথ পালটেছে, পথ হারিয়েছে, আবার ফিরে এসেছে নিজের পথে, কিন্তু, কোথাও দানিয়ুব থামে নি, চলেছে, তাকে যে ব্ল্যাক সি তে জল নিয়ে যেতে হবে, মোহনায় গিয়ে মিশে যেতে হবে সমুদ্রে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Eastern-Europe, Europe, Hungary, Slovakia, Travel and tagged , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s