ঐ যে কথায় বলে না – good things come in small packages, জাপানের বিখ্যাত পানীয় Yakult যেন ঠিক তাই। মাত্র তিন ইঞ্চি মাপের এই ছোট্ট বোতলের স্বাস্থ্য পানীয়টির মধ্যে জাপানের মানুষের সুদীর্ঘ সুস্বাস্থ্যের গোপন কথাটি লুকিয়ে আছে।
জাপানের এই ছোট্ট বোতলের গল্পটি শুরু হয়েছিল বহু বহু আগে, সালটি ছিল ১৯২১, যুবক বিজ্ঞানী Minoru Shirota মেডিসিন নিয়ে জাপানের কায়টো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন, তার কাজের প্রেরণা ছিল নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী Élie Metchnikoff এর গবেষণা – মানুষের দেহের ইমিউন সিস্টেম ও সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়া নিয়ে Metchnikoff এর গবেষণা ও তাঁর রিসার্চ পেপার গুলো Minoru Shirota কে আরও গভীর গবেষণার পথ দেখিয়েছিল।
Minoru Shirota র উদ্দ্যেশ্য ছিল তার কাজের মাধ্যমে তার সমাজের মানুষকে সুস্বাস্থ্য উপহার দেওয়া। গ্রাজুয়েশন শেষ করে Minoru Shirota আরও গভীর গবেষণায় যোগ দিলেন – তখনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, মানুষের পাচনতন্ত্রে অবস্থিত প্রচুর ভালো ব্যাকটেরিয়ারাই মানুষের সুস্বাস্থ্যের আসল নায়ক।
প্রচুর গবেষণার ফলে সৃষ্টি হল নতুন এক ধরণের ভালো ব্যাকটেরিয়া, যা কিনা মানুষের পাচনতন্ত্রে জীবিত থেকে নিজের কাজ করে যায়, মানুষকে দেয় সুস্বাস্থ্য, পাচনতন্ত্রে সাহায্যকারী অন্যান্য নানান ব্যাকটেরিয়ার সামঞ্জ্যস্য বজায় রাখে – এই ভালো ব্যাকটেরিয়া দলের নতুন নামকরণ হল – Lactobacillus casei strain Shirota।
তারপর, প্রোফেসর শিরোটার মূল লক্ষ্য ও স্বপ্ন ছিল জাপানের ঘরে ঘরে সেই উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে পৌঁছে দেওয়া। এক শক্তিশালী, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দেশবাসী তৈরির জন্যে, ছোট্ট বোতলে করে ফারমেন্টেড দুধের সঙ্গে জীবিত Lactobacillus casei strain Shirota ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে দিয়ে, সেই পানীয় পৌঁছে যেতে লাগলো জাপানের নানা দিকে, প্রোফেসর শিরোটা নতুন এই স্বাস্থ্যকর পানীয়ের নামকরণ করলেন ‘Yakult’। ১৯৩৫ এ স্থাপিত হল Yakult তৈরির কোম্পানি, সে ছিল এক রীতিমত কর্মযজ্ঞ।
ভোরের আগেই প্রচুর জাপানি মহিলা সাইকেলে করে জাপানের দূর দূর গ্রামে গঞ্জে পৌঁছে দিতে লাগলো এই Yakult পানীয়, ভোরের আগেই সুস্বাস্থ্য এসে দরজায় কড়া নাড়তে লাগলো, জাপানীদের সকাল শুরু হল স্বাস্থ্য দিয়ে, জাপানিরা ছোট্ট এই বোতলের প্রেমে পড়ে গেল। জাপানে এলো সুস্বাস্থ্যের জোয়ার, আর সেই স্বাস্থ্য বিপ্লবের মূল নায়ক নাকি ছোট্ট তিন ইঞ্চি মাপের এই Yakult এর বোতল।
তারপর যা হয় আরকি, ছোট্ট বোতলের আশ্চর্য মহিমা পৃথিবীর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল, জাপানের সীমানা ছাড়িয়ে ছোট্ট বোতল পাড়ি দিল ব্রাজিল, আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার নানা দিকে, অবশেষে ভারতবর্ষে। বর্তমানে মাইক্রোবায়োলজির নিয়ে আরও গভীর গবেষণার জন্যে Yakult এর নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র আছে।
তিন ইঞ্চি মাপের ছোট্ট সেই বোতলের বিশ্বজয়ের গল্প কিন্তু এখনো চলছে, আজ বিশ্বের প্রায় ত্রিশটি দেশের প্রচুর মানুষের সকাল হয় স্বাস্থ্য পানীয়ের এই ছোট্ট বোতলে চুমক দিয়ে – পৃথিবীর নানা প্রান্তের আরও আরও মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার আশা রাখে এই ছোট্ট বোতল। আকারে ছোট বলে অবজ্ঞা করলে কিন্তু এক্কেবারেই চলবে না।