শিন্ডলারের লিস্ট (Schindler’s List )

Whoever saves one life, saves the world entire – from Schindler’s List

শুরুটা হয় ইহুদী ভাষায় এক প্রার্থনা ও জ্বলন্ত মোম বাতির রঙিন ছবি দিয়ে – তারপর মোম যখন সম্পূর্ণ গলে যায়, শিখা নিভে যায়, ধোঁয়া উপরে উঠে যেতে যেতে ছবি সাদা কালো হয়ে যায়, সময় বদলে যায়, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পোল্যান্ডে চলে যায় গল্প – অদ্ভুত এক রহস্যময় ছবি। স্টিভেন স্পিলবার্গ এর তৈরি অন্য কোন সিনেমার সঙ্গে এই সিনেমাটির কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

মাত্র দুই সপ্তাহের যুদ্ধে পোল্যান্ডের সৈন্যকে হারিয়ে জার্মান সেনারা পোল্যান্ড দখল করে নিয়েছিল – তারপর জার্মান অধিকৃত পোল্যান্ডের সমস্ত ইহুদীদের উপরে সরকারী আইন আরোপ হল – প্রত্যেক ইহুদী পরিবারকে নিজেদের নাম, পরিচয়, হাতযশ, শিক্ষাগত যোগ্যতা সবই জার্মান সরকারের কাছে নথিভুক্ত করাতে হবে, ও সব জায়গায় প্রথমেই ইহুদী বলে পরিচয় দিতে হবে। আর সমস্ত ইহুদীদের ক্রাকাওের এক বিশেষ জায়গায়, মানে ghetto তে থাকতে হবে।

আর ঠিক সেই সময়েই, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের বাজারে, পোল্যান্ডে ব্যবসা করে মুনাফা কামিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে এক রহস্যময় জার্মান মানুষের আগমন হয় – যে কিনা নাৎসি অফিসারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে। অতি চমৎকার ভাবে, দামী ওয়াইন, সিল্ক, ঘড়ি, হীরা, সোনা ইত্যাদি ঘুষ দিয়ে নাৎসি অফিসারদের হাতে রাখতে জানে। যুদ্ধের বাজারের সমস্ত কালো বাজারের কথা ওর জানা – নাম তার Oskar Schindler।

সে চায় পোল্যান্ডের এই যুদ্ধের বাজারে এক কোম্পানি তৈরি করে মুনাফা করতে – আর সে জানে, তার এই কাজে অতি বুদ্ধিমান এক ইহুদী (Itzhak Stern) সাহায্য করতে পারে, তাই Schindler, ইহুদীদের জায়গায় গিয়ে সেই লোকটিকেই খোঁজে।

তখন ধনী ইহুদীদের ব্যবসা বলে কিছু ছিল না, জার্মানরা সমস্ত তছনছ করে দিয়েছিল – Schindler চায় সেই ফ্যাক্টরি কিনে নিয়ে – জার্মান সেনাদের জন্যে বাসন পত্র তৈরির এক কারখানা তৈরি করতে। কিন্তু, ওর কাছে কোন মূলধন নেই। ইহুদীদের কাছ থেকেই অর্থ নিয়ে, সেই অর্থ দিয়ে সে ফ্যাক্টরি তৈরি করতে চায়। ইহুদীদের অর্থ, একাউন্টেন্ট Itzhak Stern  এর বুদ্ধি, ওর নিজের কিছুই নেই – তাহলে ও কি করবে? Stern  জানতে চেয়েছিল, উত্তরে Schindler  জানিয়েছিল, জার্মান নাৎসিদের কাছে সাজিয়ে গুছিয়ে এই ফ্যাক্টরিকে পরিবেশন করার দায়িত্ব Schindler  এর – পরিবেশনের কাজটিই  Schindler  ভালো জানে, অন্য কোনও কাজ সে জানে না।

না, সিনেমার কোথাও একবারও মনে হয় নি, ঐ রহস্যময় লোকটি এক সময় বদলে যেতে পারে – বরং মনে হয়েছিল, লোকটি নাৎসি প্রপাগান্ডায় সাহায্য করছিল – তাকে মুনাফা লোভী এক ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় নি। নাৎসিদের হলকস্টের ব্যপারে Schindler সব জানে।

কিন্তু, যখন দেখা যায়, নাৎসিদের হাত থেকে ওর ফ্যাক্টরির ইহুদী কর্মীদের বাঁচাতে ও একের পর এক নাৎসি অফিসারদের ঘুষ দিয়ে চলেছিল। মনে হচ্ছিল, ঐ সময়ে কখন যেন ওর মানবতা জাগ্রত হচ্ছিল – খুব ধীরে, ধীরে। আর সেখানেই বোধহয় স্টিভেন স্পিলবার্গের মতো মহান পরিচালকের সার্থকতা – সিনেমাটির কোথাও Schindler এর নায়কোচিত ব্যবহার দেখা যায় নি, বরং গল্পের সঙ্গে সঙ্গে Schindler এর ভেতরের নায়কটি তৈরি হয়ে চলেছিল।

যাইহোক, নাৎসি বাহিনীর তৈরি কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে Schindler বারোশো ইহুদীকে নিজের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে এসেছিল – আর সবই সে করেছিল তার সেই ঘুষ দেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা দিয়ে, নাৎসি অফিসারদের প্রচুর পরিমাণে ঘুষ দিতে গিয়ে সে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল।

আর, Schindler যে বারোশো ইহুদীদের আশ্চর্য উপায়ে বাঁচিয়েছিল, আজও তারা Schindler’s Jews  নামে পরিচিত। ঐ ইহুদীদের বাঁচানো ছাড়া, Schindler  জীবনে আর অন্য কোন ব্যবসাতেই সফল হতে পারে নি, কিন্তু, ঐ ইহুদীদের কাছে জার্মান Schindler  ছিল জীবনদাতা। যখন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষের ঘোষণা করা হল – Schindler  কে চলে যেতে হবে তার ফ্যাক্টরি ছেড়ে, ইহুদীরা প্রতিদানে তাদের দাঁত থেকে সোনা গলিয়ে নিয়ে এক আংটি তৈরি করে যখন তাকে উপহার দিতে গেল – Schindler  কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল – নিজের গাড়ি ও সোনার আংটি দেখে ও বলল – এই গুলো দিয়ে তো আমি আরও বারো জনকে বাঁচাতে পারতাম – কি অদ্ভুত ছিল Schindler  এর ব্যবসা বুদ্ধি – জার্মান হয়েও ইহুদীদের বাঁচানো, ঘুষ দিয়ে কিনে নেওয়া।

পরে, ঐ ইহুদীরা Schindler  এর নামে ফাউন্ডেশন তৈরি করেছিল এবং Schindler  এর আশ্চর্য কাহিনী নিয়ে লেখা হয়েছিল Schindler’s Ark উপন্যাস। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পটভূমিতে, এই এক অদ্ভুত সত্যি ঘটনার উপরে তৈরি এই ছবিটি মানবতার ইতিহাসের এক দলিল বলা যায়। এক অদ্ভুত বন্ধুত্বের গল্প।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Movie time -:) and tagged , , . Bookmark the permalink.

4 Responses to শিন্ডলারের লিস্ট (Schindler’s List )

  1. indranilmutsuddi74 বলেছেন:

    Great Post…দারুন লাগল…

  2. Maniparna Sengupta Majumder বলেছেন:

    আমার অন্যতম প্রিয় সিনেমা… 🙂

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s