ইচ্ছে করে

ইচ্ছে করে – ভূত, প্রেত, দত্যি, দানো, পেত্নী, শাঁকচুন্নি, ব্রম্ভ্রদত্যি, মামদো – হাঁচি, কাশি, টিকটিকি, উত্তর দক্ষিণ, স্বর্গ, নরক, জাতিস্মর, পরজন্ম, পূর্বজন্ম – সবই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।

আসলে এই বিশ্বাসটুকুই বোধহয় জীবনের স্থ্যায়িত্ব আনে – তাই না? বাকি সবই তো চলমান। জীবন মানেই তো এক রূঢ় বাস্তবের শুষ্কতা, শূন্যতা। এক বিশাল শূন্যতায় হারিয়ে যাওয়া – আছি ও নেই এই দুইয়ের মাঝে চলা।

ওই যে, আকাশ গঙ্গার তারারা ওরা তো আমারই কোন পূর্বপুরুষ, যারা চলে গেল ওই আকাশ গঙ্গার তারা হয়ে আমাকে দেখছে, আমার জীবনের সমস্ত সুখ দুঃখের সাক্ষী হচ্ছে – এই বিশ্বাসটুকুর মধ্যে কেমন যেন এক সুরক্ষা আছে, নিশ্চিন্ততা আছে, রয়ে যাওয়ার এক আশ্বাস আছে।

বিজ্ঞান যখন বলে – না, আকাশ গঙ্গার তারা কোন মানুষের আত্মা নয়, ওই তারা মানে কোন এক দূর নক্ষত্রের আলো, আলোকবর্ষ দূরের কোন এক নক্ষত্র – হয়তো বা সেই নক্ষত্র বহু আগেই মৃত হয়েছে, যার আলো এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি।

জীবনের সব বিশ্বাস গুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায় – থাকবে না? কিছুই থাকবে না – সব এই বিশাল মহাবিশ্বের অসীম, অনন্ত,  কালোর মাঝে  হারিয়ে যায় ? নাঃ, ঠিক মানতে ইচ্ছে করে না।

যারা চলে যায়, নীহারিকার দেশে স্থান পায়, আবার অন্য কোন রূপে অন্য কোন স্থানে, পৃথিবীর বুকেই ফিরে ফিরে আসে – ভাবতেও কেমন যেন এক নিশ্চিন্ততা আনে।

থাকবে, জীবন অমরত্ব পাবে, এই বিশ্বাসই যেন মানুষের জীবনকে চালিত করে। তাই, বিজ্ঞান যতই শূন্যতার কথা বলে, মহাশূন্যের কথা বলে, তারার জন্ম মৃত্যুর কথা বলে, ব্ল্যাক হোলের কথা বলে – এই নড়বড়ে সময়ে দাঁড়িয়ে, পরিবেশ দূষণের বিষাক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে নিতে ঐ বিশ্বাস গুলোকেই যেন স্থায়ী মনে হয়, অতি সহজ সরল বলে মনে হয়।

হাজার বছরের জ্ঞানের আলো দিয়েও ঐ বিশ্বাস গুলোর ভিত তাই কিছুতেই নাড়ানো যাবে না, যতই পৃথিবীর বুকে মানুষের জীবনে জটিলতা বাড়ে ততই ঐ বিশ্বাস গুলোর ভিত আরও শক্ত হয়ে ওঠে – হয়তো, ঐ বিশ্বাস গুলোর মধ্যে জটিলতার এক সহজ আশ্রয় আছে, সহজ এক সমাধান আছে। যা কিছুই আমাদের সীমিত জানার বাইরে তাকেই আমারা বুঝে নেওয়ার জন্যে নানান বিশ্বাসের আশ্রয় নিই। সহজ করে নিতে চাই।         

Posted in Fiction | Tagged , | ১ টি মন্তব্য