জাগ্রেবের পথে চলতে চলতে এক রাস্তার মোড়ে চোখে পড়ে নিকোলা টেসলার ভাস্কর্য – চিন্তিত ভঙ্গি, ইউরোপের পথে নানান রাজা, রানী, ডিউক, যুদ্ধ বিজয়ী সেনাপতির ভাস্কর্য চোখে পড়েছে, কিন্তু বৈজ্ঞানিকের ভাস্কর্য? এই প্রথম।
আসলে, নিকোলা টেসলা ছিলেন ক্রোয়েশিয়ার মানুষ, তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে ক্রোয়েশিয়ায়, যৌবনে তিনি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার জন্যে পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকা।
তাঁর সময়ের সমস্ত বড় বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে এক সারিতেই ছিল তাঁর নাম, কিন্তু, কি ভাবে যেন বিজ্ঞানের ইতিহাসে টেসলার নামটা একটু চাপা পড়ে গেছে, অথচ, তাঁর সমস্ত আবিষ্কার আমেরিকাকে প্রযুক্তির দিক দিয়ে এক শক্তিশালী দেশ তৈরি করেছিল।
টেসলাকে ওয়ারলেস কমুনিকেশনের জনক বলা যায়, রেডিও ট্রান্সমিশন থেকে শুরু করে টেলিভিশন ব্রডকাস্টিং সব তাঁরই আবিষ্কার ছিল, রিমোট কন্ট্রোল থেকে শুরু করে গাইদেড মিসাইলের থিয়োরি সবই ছিল টেসলার আবিষ্কার। নিকোলা টেসলা ছিলেন সেই মানুষ যিনি অল্টারনেটিং কারেন্ট সিস্টেম দিয়ে নায়েগ্রা ফলস থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে আমেরিকাকে কারেন্ট সরবরাহ করেছিলেন।
সেই সময়ে তাঁর সমসাময়িকরা তাঁকে বিজ্ঞানের দুনিয়ার visionary বলে সম্মান করতো – কিন্তু, টেসলা মানুষ হিসাবে ছিলেন খুবই রহস্যময়, বাস্তববোধহীন, আত্মকেন্দ্রিক। তাই, তাঁকে সাধারণ মানুষরা তো ভুল বুঝেইছিল, সেই সময়ে অল্টারনেটিং কারেন্ট নিয়ে তাঁর রহস্যময় কাজের জন্যে সাধারণ মানুষেরা অনেকেই তাঁকে জাদুকর বলে জানতো।
আবার, তার সময়ের অনেক বৈজ্ঞানিক বিদ্যুৎ বিষয়ে তার আইডিয়াকে নিজের কাজে লাগিয়ে নিজের নামে ব্যবহার করেছিল, এমনকি, রেডিওর আবিষ্কর্তা মার্কোনিও তার আইডিয়াকে নিজের নামে বিশ্বের কাছে প্রকাশ করেছিলেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীটা ছিল আধুনিক বিজ্ঞানের যুগ, এই সেই সময়েই মানুষ বিজ্ঞান ও প্রকৃতির অসীম রহস্যকে নিজের কাজে লাগানোর প্রথম ধাপ নিয়েছিল – আর সেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রথম ধাপের প্রায় অনেকটাই টেসলার অবদান।
টেসলা ছিলেন সেই জিনিয়াস মানুষ যে কিনা অল্টারনেটিং কারেন্ট আবিষ্কার করে পৃথিবীর চেহারাই বদলে দিয়েছিলেন – তাঁকে বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদরা ভুলে গেলেও ক্রোয়েশিয়া কিন্তু ভোলে নি। দেখি, জাগ্রেবের বইয়ের দোকানে টেসলার জীবনী নিয়ে বাচ্চাদের কমিকস, ক্রোয়েশিয়ার মানুষ হয়তো চায় বর্তমান প্রজন্মের বাচ্চারা সেই মহান বৈজ্ঞানিকের রহস্যময়তা, আবিষ্কারের গল্প, জীবনী সব জেনে বড় হোক।
তাঁর সময়ে অনেকেই তাঁকে পাগল ভাবতো, কিন্তু, জিনিয়াস ও পাগল তো দুই জমজ ভাই, দু’জনেই একই রকম রহস্যময়, বাস্তববোধহীন, দু’জনেই একই আত্মকেন্দ্রিকতার অধিকারী, দু’জনেরই একই ঘরে বাস – তাই অনেক সময়ই এক জনকে দেখে আরেকজন বলে ভুল হয়।