গ্রীক পুরাণ মতে, ভালোবাসার দেবী ভেনাসের ছেলে কিউপিড, তাই সেও ভালোবাসা ও চাহিদার দেবতা। সে হাতে তীর ধনুক নিয়ে ঘোরে আর তার তীরের ঘায়ে মানুষ মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়ে যায়।
নিজের তীর থেকেই কি ভাবে যেন কিউপিডের শরীরে ক্ষত হয়ে যায় এবং কিউপিড সাইকির সৌন্দর্য দেখে প্রেমে পড়ে যায় – আর সেই প্রেম কাহিনী, প্রেমের টানাপড়েনের গল্প ইউরোপের নিওক্লাসিকাল যুগের বহু শিল্পীকে প্রেরণা দিয়েছিল।
কিউপিড ও সাইকি – গ্রীক পুরাণের এই দুই কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে ইউরোপের শিল্প ইতিহাসের নিও ক্লাসিক্যাল সময়ে বহু চিত্র, ভাস্কর্য তৈরি হয়েছিল। আর ইটালিয়ান ভাস্কর্য শিল্পী Antonio Canova র প্রধান প্রেরনাই যেন ছিল কিউপিড ও সাইকির সেই অমর প্রেম কাহিনী।
Canova তার সময়ে এই যুগলের বেশ কয়েকটা স্ট্যাচু তৈরি করেছিল, তার মধ্যে এই স্ট্যাচু ‘Psyche Revived by Cupid’s Kiss’। ইউরোপের নিও ক্লাসিক্যাল যুগের এই মাস্টারপিসটি উনিশ শতাব্দীর শুরুতেই ল্যুভরের অধিকারে আসে, দ্বিতীয়টি রাশিয়ার মিউজিয়ামে শোভা দেয়। ল্যুভরে মিউজিয়ামের মিকেলাঞ্জেলো গ্যালারীর এক অন্যতম আকর্ষণ Canova র এই বিখ্যাত স্ট্যাচু।
গ্রীক পুরাণের গল্প অনুসারে, সাইকি পাতালপুরী থেকে উর্বরতার দেবী ‘Proserpina’ এর কাছ থেকে দেবী ভেনাসের জন্যে, একটি পাত্রে করে স্বর্গীয় সৌন্দর্য নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু, পথে নিজের কৌতূহলের বশে, ও নিজের জন্যে একটু স্বর্গীয় সৌন্দর্য রেখে দেওয়ার জন্যে যাদু পাত্রের মুখ খুলে উঁকি দিয়ে ভেতরের জিনিস দেখতে গিয়ে সাইকি গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়েছিল।
আসলে সেই পাত্রে সৌন্দর্য ছিল না – ছিল মরণ ঘুমের যাদু। আর সাইকিকে মরণ ঘুমে অচেতন দেখে ব্যথিত, দুঃখী কিউপিডের ভালোবাসার প্রকাশ – পুরাণের এই বিষয়টিকে Canova তার শিল্পের বিষয় হিসাবে বেছে নিয়েছিল, আর মাধ্যম ছিল শ্বেত পাথর। Canova র কাছে এর চেয়ে রোম্যান্টিক বিষয় আর কি হতে পারে!
সেই মরণ ঘুম থেকে সাইকিকে জাগাতে সাইকির প্রতি কিউপিডের গভীর ভালোবাসার প্রকাশ, সাইকির শরীরের সদ্য মরণ ঘুম ভাঙ্গার অলসতা, জড়তা, অসারতা, সাইকির সরল সৌন্দর্য সবই প্রকাশ পেয়েছে শ্বেত পাথরের গায়ে। এমনকি সাইকির গায়ের কাপড়ের ভাঁজ গুলোও সুক্ষ ভাবে পাথরের গায়ে ফুটে উঠেছে।
কিউপিড ও সাইকির ভালোবাসার গল্প তো ছিল এক কল্পনা – পুরাণের গল্প, কিন্তু, সেই গল্প-কল্পনাই যখন শিল্পী মনের গভীরতা নিয়ে বাস্তবে পরিণত হয়ে শ্বেত পাথরের গায়ে অবিনশ্বর হয়ে যায় – তখন আমাদের মতো সাধারণ মানুষ তো আশ্চর্য হবেই, আর মানুষ সেই কল্প-বাস্তব রূপকে সংরক্ষণ করে যাবে বহু সযত্নে, যাতে যুগ যুগ ধরে মানুষ শিল্পীর কল্পনার গভীরতাকে একটু হলেও স্পর্শ করতে পারে।