প্রশ্ন যদি হয় – কোন দেশের পার্লামেন্ট হাউস পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থাপত্যের নিদর্শন। উত্তরে – আমি হয়তো, এক নিমেষেই, কোন দ্বিধা না করেই বলে ফেলতে পারি – হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট বিল্ডিং।
হয়তো, পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের পার্লামেন্ট হাউস আরও অনেক সুন্দর, বিশাল – কিন্তু, আমার দেখা পার্লামেন্ট হাউসের মধ্যে বুদাপেস্টের পার্লামেন্ট হাউস সুন্দরতম, এক কথায় অপূর্ব, অদ্ভুত, আশ্চর্য সুন্দর।
দানিয়ুব নদীর শান্ত, ধীর লয়ের বিস্তীর্ণতার পাশে, সারা গায়ে উনবিংশ শতাব্দীর স্থাপত্যের আশ্চর্য অভূতপূর্ব অলংকার জড়িয়ে নিয়ে, ইতিহাস জড়িয়ে নিয়ে, বুদাপেস্টের এক অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে রয়ে যায় হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট – বুদাপেস্ট শহর কেন্দ্রে এলে, দূর থেকেই যা নজরে পড়তে বাধ্য।
বলা যায় বুদাপেস্টের এক প্রতীক এই পার্লামেন্ট হাউস – আর সেই জন্যেই বোধহয় যুদ্ধের সময় রাশিয়ান ও মিত্রশক্তির বোমার আঘাত থেকে এই হাঙ্গেরিয়ান পার্লামেন্ট রক্ষা পায় নি – শোণা যায়, এখনো নাকি এই পার্লামেন্টের গায়ে, কোথাও কোথাও যুদ্ধের সময়ে ছোড়া বুলেটের চিহ্ন রয়ে গেছে।
Gothic Revival স্টাইলে তৈরি হাঙ্গেরিয়ান এই পার্লামেন্ট হাউস ইউরোপের অন্যতম পুরনো বিধানসভা ও হাঙ্গেরির সবচেয়ে বৃহত্তম বিল্ডিং এবং আজকের হাইরাইজ বিল্ডিঙের যুগেও বুদাপেস্টের সবচেয়ে উচ্চতম বিল্ডিং। হাঙ্গেরিতে কম্যুনিস্ট রাজত্বের সময় এই পার্লামেন্ট হাউসের উঁচু গম্বুজের চূড়ায় জ্বলজ্বল করতো – কম্যুনিজমের প্রতীক ‘লাল তারা’ – যা কিনা বহু দূর থেকে দেখা যেত। তারপর, নব্বইয়ের দশকে সেই লাল তারা সরিয়ে দিয়ে রিপাবলিক অফ হাঙ্গেরি গঠন হয়।
যাইহোক, ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর পার্লামেন্টের ভেতরে ঢুকে, গাইডেড ট্যুর নিয়ে, এর আশ্চর্য সৌন্দর্যকে আরও কাছ থেকে দেখা যায়। দানিয়ুবের দিকে মুখ করে লম্বা টানা বারান্দায় দেখা যায় সারি বাঁধা, হাঙ্গেরিয়ান শাসক, মিলিটারি ব্যক্ত্বিত্ব ও বিপ্লবীদের স্ট্যাচু সাজানো – যা দেখতে দেখতে টুরিস্টরা হেঁটে চলে। বর্তমানে বিশাল এই পার্লামেন্ট বিল্ডিঙের খুব কম অংশই ব্যবহার করা হয় – নিয়মিত পার্লামেন্ট বসে। তাছাড়া, একদিকে আছে হাঙ্গেরির বৈপ্লবিক ও রক্তাক্ত ইতিহাসের মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, ও আর একদিকে রাখা Holy Crown of Hungary ।
বিশাল এই স্থাপত্যে ও স্থাপত্যের গায়ে গায়ে কারুকাজের সুক্ষতার জন্যে মনে হয় বছরের প্রায় সবসময়ই সংরক্ষণের কাজ চলে। আমরা যে সময়ে বুদাপেস্টে উপস্থিত ছিলাম, তখনো পার্লামেন্ট হাউসকে ঘিরে সংরক্ষণের কাজ পুরোদমে চলছিল।
তবে, হাঙ্গেরিয়ানরা জানে ওদের অপূর্ব সুন্দর পার্লামেন্ট হাউস দেখার জন্যে, বহু দূর দেশের বহু মানুষ ওদের দেশে আসে – আর তারা এতদুর এসে ফিরে যাবে? তাই, খুবই সন্তর্পণে টুরিস্টদের জন্যে জায়গা ছেড়ে, রাস্তা ছেড়ে দিয়ে, ওরা খুবই গুছিয়ে সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে চলে। বিগত দিনের হাঙ্গেরিয়ান ঐশ্বর্যের, হাঙ্গেরিয়ান স্থাপত্যের অভূতপূর্ব নিদর্শনকে যে ওরা খুবই সযত্নে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্যে আগলে রাখতে চায়।
আপনার লেখাটা টুইটারে শেয়ার করলাম। এত সুন্দর ও সমৃদ্ধ লেখাগুলি আরো বেশী মানুষের কাছে পৌঁছক… 🙂
আমার ব্লগ পোস্ট social media তে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
🙂 …