উত্তর ইউরোপের দেশ গুলোর শহর – যেমন রিগা, ভিলিনুস শহরের পথে এক অদ্ভুত জিনিস নজরে পড়েছিল – যা দেখে বেশ আশ্চর্য হয়েছিলাম। এই শহর গুলোর পথে দেখি, কোন কোন ল্যাম্প পোস্টকে নানা রঙের উল দিয়ে বোনা crochet দিয়ে কে যেন সুন্দর ভাবে মুড়িয়ে দিয়েছে – ঠিক যেন কেউ ল্যাম্প পোস্ট গুলোকে সোয়েটার পড়িয়ে দিয়েছে।
ইউরোপের পথে ল্যাম্প পোস্ট গুলোর মধ্যে একটু পুরনো দিনের ছোঁয়া তো থাকেই – দেখতেও ভালো লাগে – অনেক অন্যরকম, কিন্তু, উলের সোয়েটার পড়িয়ে দেওয়া ? আগে কখনো দেখি নি – তাই একটু অবাক হয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম – উত্তর ইউরোপের দেশে বেশী ঠাণ্ডা পড়ে তো, তাই ল্যাম্প পোস্ট গুলোও খুব ঠাণ্ডা হয়ে যায় – তাই হয়তো ল্যাম্প পোস্ট গুলোকে উষ্ণ রাখার জন্যে সোয়েটার তৈরি করে মুড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ল্যাম্প পোস্ট গুলোকে নানা রঙের উলের কুরুশ বোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়ার এক বৈজ্ঞানিক যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম আর কি – কিন্তু, নাঃ এর পেছনে কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই, আছে শিল্প – এ এক নতুন ধরণের পথ শিল্প – ঠিক গ্রাফিতির মতো।
গ্রাফিতি যেমন শুরু হয়েছিল শুধুই শিল্পের জন্যে – এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য ছিল না, তারপর ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বিশ্বে, তেমনি এই উলের কুরুশশিল্পের সূচনা হয়েছিল – শুধুই শিল্প, আর্ট রূপে।
কিন্তু, গ্রাফিতি থেকে একটু আলাদা – যেমন, গ্রাফিতি ইচ্ছে মতো সরিয়ে দেওয়া যায় না, কিন্তু, এই শিল্প চাইলে কিছুদিন পরে সরিয়ে দেওয়া যায়, রোদ বৃষ্টিতেও রং পুড়ে যাওয়া বা ধুয়ে যাওয়ার কোন ভয় নেই। আবার এই শিল্পে রঙেরও দরকার নেই, শুধুই রঙিন উলের প্রয়োজন।
প্রায় দশ বছর আগে আমেরিকার Houston শহরের Magda Sayeg তার বুটিকের দরজার হাতলকে রঙিন উলের কুরুশ বোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল – কিন্তু, কি ভাবে যেন, সেই কুরুশ শিল্প, সেই বুটিকের দরজার হাতল ছাড়িয়ে যাত্রা করতে শুরু করেছিল, পৃথিবী ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছিল – প্রথমে আমেরিকার নানা শহর, তারপর ইউরোপের শহরের গলিতে ছড়িয়ে পড়েছিল কুরুশ শিল্প – এক দল মানুষ, নানা শহরের অনেক প্রাণহীন, কুৎসিত লোহার বস্তুকে এক একটি রঙিন সোয়েটার দিয়ে মুড়ে দিতে দিতে, কুরুশ শিল্পকে যে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে, এক রঙিন গল্প বলার সূচনা করেছিল – তা এক আশ্চর্যের বিষয়। আমেরিকা ও ইউরোপের শহর গুলো এক নতুন শিল্পের জন্ম দিয়েছিল – Yarn bombing।
শীত ও বৃষ্টির মেঘলা ধূসর দিনে রঙিন Yarn bombing ইউরোপের ধূসর শহরের, ধূসর গলি গুলোয় যেন একটু রং ঢেলে দিয়েছিল, দিয়েছিল প্রান, উজ্জ্বলতা – তাই, হয়তো মানুষ আজকের অতি উন্নত শহরে, স্মার্ট শহরে, দ্রুত গতিমান ডিজিটাল যুগে বসবাস করেও – এক সময় সাপেক্ষ শিল্পকে আপন করে নিয়েছে – যার সঙ্গে সে নিজেকে যুক্ত করতে পারে, নিজের দুই হাতের কর্ম কুশলতার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে মস্তিষ্কের শিল্প চেতনা ও রং।