এই গাছটির জন্যেই আমার ছেলেবেলার স্মৃতির ছবির রঙটি হলুদ – উজ্জ্বল সোনালি কাঁচা হলুদ। যদিও গাছটিকে দেখে বড় হয়েছি – গাছটির সঠিক নাম কিন্তু জানতাম না।
ছেলেবেলায় চলতি ভাষায় এই ফুল গাছটির নাম জেনে এসেছিলাম – বাঁদর লাঠি। কারণ হয়তো – ফুল গুলো ঝড়ে পড়ার পড়ে যে ফল দেখা যায় তা অনেকটা ছোট ছোট লাঠির মতো।
তারপর, বহু পরে শুনলাম গাছটির নাম – অমলতাস। আহ্, কি সুন্দর নাম। ইংরেজি নামটি আরও সুন্দর – golden rain বা golden shower tree ।
যখন এই ফুল গুলো ফোটে, যেন সত্যিই মনে হয় – প্রকৃতি স্বর্ণ বৃষ্টি করছে। গাছে হলুদ ফুলের ঝাড়বাতি, ও গাছের নিচে ঝরে পড়া হলুদ ফুলের মখমলি চাদর। অবশ্য এই ফুলের আরও অন্য এক নাম আছে – Cassia fistula।
অমলতাস গাছের কথা বোধহয় প্রথম পড়েছিলাম বুদ্ধদেব গুহর লেখায়। কিন্তু, এই ফুল যা কিনা প্রতি বসন্তে, গ্রীষ্মে জঙ্গল আলো করে ফোটে – তারই নাম অমলতাস। তা কিন্তু, এক্কেবারেই জানতাম না।
কখনো কখনো হয়তো, অতি কাছের অনেক জিনিসকে না জেনেই জীবন কেটে যায়। যাইহোক, এই অমলতাস ফুলটি যদিও অতি অবহেলায় ভারতবর্ষের যে কোন কোণে, যে কোন জঙ্গলে দেখা যায়, এই ফুল গাছ কিন্তু, থাইল্যান্ডের জাতীয় গাছ ও এই গাছের ফুল থাইল্যান্ডের জাতীয় ফুল।
তাছাড়া, অমলতাস ফুলটি ভারতবর্ষের কেরালা রাজ্যের রাষ্ট্র ফুল হিসাবে পরিচিত। এই গাছটি দক্ষিণ ভারতে গুরুত্ব পায়। আয়ুর্বেদিক ঔষধে নাকি এই গাছটি খুবই ব্যবহার হয়।
বসন্ত এলেই গাছ গুলো যেন হলুদ ফুলের ভারে একদম নুয়ে পড়ে। নীল আকাশের ক্যানভাসে সেই হলুদ ফুলের দল হলুদ রেণু ও পাপড়ি দিয়ে যেন এক স্বপ্ন ছবি এঁকে দিয়ে যায় – আমার ছেলেবেলার সবুজ-হলুদ ছবি। তাই, চৈত্রের দুরন্ত গরমে, এই গাছে যখনই হলুদ ফুলের মেলা দেখি, নস্টালজিক সেই ছবিটি যেন ফিরে ফিরে আসে।
আর এই গাছে যখন ফুল ফোটে, জায়গাটা এক হালকা মিষ্টি বুনো গন্ধে ভরে থাকে, আর গাছের নিচে ঝরে পড়া হলুদ পাপড়ির এক মখমলি চাদর বিছানো থাকে – সেই গন্ধ, সেই রঙ, সব যেন সময়কে ধরে রাখে। মন মুহূর্তের জন্যে ছেলেবেলার সেই দিনে ফিরে যায়।
পৃথিবীতে প্রতিদিন বহু কিছু বদলে গেলেও প্রকৃতির বুকে আজও যেন বহু ছবি একই রয়ে গেছে, এবং রয়ে যাবে। আর সেই আদিম প্রকৃতির কাছে ছেলেবেলা, কৈশোরের সব ছবি গচ্ছিত রেখে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে হয়। এই তো নিয়ম।