আমি জানতাম, মিদিপিরেনিস পাহাড় শ্রেণীর গায়ে, শীতলতম সেই মধ্য রাতের কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেই রাতে পূর্ণিমা রাতের পরে যে চাঁদ ওঠে, সেই চাঁদের আলো যখন মধ্য রাতে দক্ষিণ ফ্রান্সের তুষার ধবল মিদিপিরেনিস পাহাড় শ্রেণীকে আমাদের চোখের সামনে স্নান করিয়ে দিচ্ছিল, বাইরে ছিল মাইনাস টেন তাপমাত্রা।
বড় এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা বানিয়ে নিয়ে, সেই রাতে, সেই হাড় হিম করা মিদিপিরেনিস ঠাণ্ডায়, বাইরে দাঁড়িয়ে, তুষার ঢাকা মিদিপিরেনিস পাহাড় শ্রেণীর গায়ে চাঁদের আলোর মায়াবী খেলা দেখছিলাম – সেই অপূর্ব মাতাল করা সৌন্দর্যের দেশে, সারা রাত ঘুম ছিল না চোখে – অপূর্ব সেই আদিম অদ্ভুত সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ-স্তব্ধ করে দিয়েছিল।
রাত জেগে ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখে সেই নির্জনতম সময়কে, সেই আদিমতম অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে চাইছিলাম। তখনই বুঝেছিলাম, অন্তরে জেনেছিলাম – এই অপূর্ব মায়াবী প্রাকৃতিক শীতলতম রাতের কথা জীবনে ভুলবো নাকো।
সেই রাত, সেই তুষারধবল মিদিপিরেনিস পাহাড় শ্রেণীর বুকে মধ্য রাতে চাঁদের আলোর লুকোচুরির সৌন্দর্য, সেই ঠাণ্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা রহস্যময় রাতের কথা বার বার আমার গল্পে ফিরে ফিরে আসবে। সেই রাত যে আমার চেতনায় গেঁথে রয়ে যাবে – সেই রাতেই বুঝেছিলাম। সেই রাতে দেখেছিলাম মিদিপিরেনিসের আকাশে কি ভাবে চাঁদ সরে সরে যায়।
পৃথিবীর এক কোণে, প্রকৃতির বুকে যে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রতিদিন নিয়মিত আলোছায়ার এই খেলা হয়ে চলেছে। আর সেই রাতে আমরা, সেই অনন্ত সময়ের এক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছিলাম। প্রকৃতির বিশালতা সত্যিই আমাদের সম্মোহিত করে দেয়। আর ঐ বিশাল মহানতা আমাদের দেয় – চিন্তার ক্ষমতা। আর, আর দেয়, আমাদের জীবনের ক্ষুদ্র দৈনন্দিনতা নিয়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা।
সেই রাতে প্রকৃতির সেই অপূর্ব সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে হতে মনে হয়েছিল – মানুষ হয়তো পৃথিবীর বুকে আরও আরও এমন অপূর্ব সৌন্দর্য দেখার জন্যেই বাঁচে। আর আমি! আমি যখনই বাস্তব জীবনে ক্লান্ত হয়েছি, ভারাক্রান্ত হয়েছি, প্রকৃতির কাছে সতেজ হওয়ার প্রেরণা পেয়েছি। প্রকৃতি যেন মানুষকে এক নতুন আশা দিতে জানে, আশ্রয় দিতে জানে।