রোডিনের ভাস্কর্য – দ্যা কিস্ (Le Baiser or The Kiss)

Le Baiser or The Kiss (1).JPG

শীতে প্যারিসের Tuileries ‌গার্ডেনের সমস্ত গাছের পাতা ঝড়ে গিয়ে এক নিঃস্ব রিক্ত বৈরাগী ছবি তৈরি হয় – আর শীতের প্রকৃতির সেই বৈরাগ্যময় ধূসর রাজ্যে, Tuileries ‌গার্ডেনের, সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে রোডিনের বিখ্যাত ভাস্কর্য – দ্যা কিস্‌, নজরে পড়ে। হ্যাঁ, নজরে পড়বেই।

প্রকৃতির রিক্ততার মধ্যে মানুষের অনুরাগের মগ্নতার তীব্র প্রকাশ – যেন আদম ও ইভ – তাই চোখে পড়বেই। এই পথে চলতে চলতে অনেকেই এই ভাস্কর্যের সামনে এসে দাঁড়ায় – দেখে, ভাবে।

এই ভাস্কর্যের পাশেই আছে l’Orangerie মিউজিয়াম। মিউজিয়ামে ঢোকার আগে এই ভাস্কর্যের সামনে থামতেই হয়।

দান্তের ডিভাইন কমেডির দুই চরিত্র Paolo ত্রবং Francesca, এই ভাস্কর্যের প্রেরণা ছিল। দান্তের কাব্যের সেই দুই চরিত্রের মগ্ন অনুরাগের রূপ রোডিন ঠিক এই ভাবেই দেখেছিলেন। ১৮৮৭ তে শিল্প সমালোচকরা যখন এই ভাস্কর্যের ছোট্ট রূপ দেখেছিল – নাম দিয়েছিল Le Baiser বা The Kiss।

রোডিন, মার্বেল বা ব্রোঞ্জের বড় ভাস্কর্য তৈরি করার আগে সর্বদাই ছোট ও নরম পদার্থ যেমন প্লাস্টার, টেরাকোটা, ব্রোঞ্জ ইত্যাদি দিয়ে এক ছোট ভাস্কর্য তৈরি করতেন।

যখন দেখতেন সেই ছোট ভাস্কর্যে সব নিখুঁত হয়েছে তখনই তিনি বড় ভাস্কর্য তৈরি করতেন। তাই, রোডিন বড় এই ভাস্কর্য ‘The Kiss’ তৈরির আগে ব্রোঞ্জ টেরাকোটা ও প্লাস্টার দিয়ে এর বহু ছোট নমুনা তৈরি করেছিলেন।

Le Baiser or The Kiss (2).JPG

ব্রোঞ্জের তৈরি এই ভাস্কর্যের ছোট এক নমুনা ১৮৯৩ তে যখন শিকাগোর শিল্প প্রদর্শনীতে পাঠানো হয়েছিল – সেখানের রক্ষণশীল শিল্প সমালোচকরা নাক কুঁচকে ছিল – তখন বলা হয়েছিল – এই ভাস্কর্যকে পাবলিক প্রদর্শনীতে রাখা যাবে না।

কিন্তু, হয়তো, এই ভাস্কর্যের আদিম মগ্ন আবেদনকে ওরা ঠিক এড়িয়েও যেতে পারছিল না। তাই, এই ভাস্কর্যের জন্যে আলাদা ও প্রাইভেট জায়গা নির্ধারিত করা হয়েছিল। সেই সময়ে, সবাইকে এই ভাস্কর্য দেখানো হয় নি।

যাইহোক, বিশ্ব প্রদর্শনীর জন্যে ফ্রান্স, রোডিনকে এই ভাস্কর্যের বড় নমুনা তৈরি করতে বলেছিল। আর, ১৮৯৮ তে ফ্রান্সে প্রথম এই ভাস্কর্যের পাবলিক প্রদর্শনী হয়েছিল। ফ্রান্সের মানুষ অনেক সহজেই তাঁদের শিল্পীর তৈরি এই ভাস্কর্যকে গ্রহন করেছিল।

বলা বাহুল্য, এই ভাস্কর্য যথেষ্ট সমালোচনা যেমন সহ্য করেছিল, তেমনি বিভিন্ন মহল থেকে প্রচুর প্রশংসাও পেয়েছিল। তাই, রাতারাতি এই ভাস্কর্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। তারপর, রোডিনের এই বিখ্যাত ভাস্কর্যের অনেক replica তৈরি হয়েছিল।

হয়তো, শিল্পের নিয়মই হল – সময়কে অতিক্রম করা। এক সময়ে বসবাস করে অন্য এক সময়ের গল্প বলা। তাই যত বিখ্যাত শিল্পীই হোক না কেন, তার সৃষ্টিকে মিশ্র সমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s