এখানে পাহাড় সজীব হয় গরুর গলায় বাঁধা ঘণ্টির সুরেলা রিনরিনে আওয়াজে। নির্জন পাহাড়ের ঢালে সেই সুরেলা শব্দ কানে গেলে জীবনের ‘স্ট্রেস’ মুহূর্তে উবে যাবেই। সুইস জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির সঙ্গে গরুর অবদান খুবই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে বলে মনে হয়। সুইস চকোলেট, সুইস চীজ ‘Fondue’ যাদের খাদ্য সংস্কৃতির অঙ্গ – গরুকে তো তাঁদের ভালোবাসতেই হয়। তাই, সুইস রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রায়ই দেখি সাদা কালো গরুর হাসি হাসি মুখের মূর্তি। এমনকি, স্যুভেনিরের দোকানগুলোতেও নানা আকারের গরুর মূর্তি ও গলার ঘণ্টি বিক্রি হয়। তাই সুইজারল্যান্ডে গিয়ে স্যুভেনির হিসাবে গরুর গলার ঘণ্টি না কিনে বোধহয় কেউই ফেরে না – আমিও ফিরি নি।
গ্রামীণ সুইজারল্যান্ডের পথে ট্রেনে যেতে যেতে পাহাড়ের ঢালের ঢালু উঁচুনিচু সবুজ ঘাস জমিতে ছড়িয়ে থাকা গরু এক অন্যতম সাধারণ সুইস দৃশ্য। সুইস আল্পসের কোলে হালকা তুষার ঢাকা ছবির মতো সুন্দর এক ছোট্ট সুইস গ্রাম Grindelwald এ যখন পৌঁছলাম, দুপুরের সূর্য মুখ ঢেকেছে মেঘের আড়ালে, গ্রামের মধ্যের ছোট্ট রেল স্টেশনটি বৃষ্টিতে স্নান করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে সবে। আর গ্রামটি নিঝুম, শান্ত, নির্জন, ঠাণ্ডা এক সতেজ সৌন্দর্যে ছেয়ে আছে। আমরা বিদেশী ভ্রমণার্থি, যা দেখি তাই ভালো লাগে। গ্রামের পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটা শুরু করলাম।
এই সুইস গ্রামের উপরেই যেন ঝুঁকে পড়েছে আল্পসের Wetterhorn, Eiger পাহাড় চূড়া, তাছাড়া এই গ্রামের প্রেক্ষাপটে দেখা পায় আল্পসের অন্যান্য তুষার ঢাকা পাহাড় চূড়া – বলা যায় আল্পসের উপত্যকায় এই গ্রামের অবস্থান।
পাহাড়ের কোলে এই গ্রামটি আঠারো শতক থেকে ধীরে ধীরে বিশ্বের অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় টুরিস্টদের কাছে পরিচিত হয়েছে। অনেকেই এখানে এসে এই উপত্যকার আশেপাশের নানান অগম্য আল্পাইন পাহাড় চূড়ায় আরোহণ করেছে, আল্পসের এই অঞ্চলকে অ্যাডভেঞ্চারের আশায় আবিষ্কার করেছে।
উনিশ শতকে রাস্তা ও ট্রেন লাইন তৈরি হয়ে পাহাড়ি, দুর্গম এই আল্পাইন গ্রামটি টুরিস্টদের জন্যে সুগম হয়েছে। প্রচুর হোটেল, রিসোর্টে ভরা এই গ্রাম। প্রায় এক শতাব্দী ধরে টুরিস্টদের উপযোগী ও সহজ গম্য করে তোলা হয়েছে এই গ্রামের পরিবেশকে। স্কি লিফট থেকে শুরু করে কেবল কার, আল্পাইন কুটীর, হাইকিং রুট সবই আছে এখানে। শীতকালে স্কি-এর মরশুমে প্রচুর টুরিস্ট হানা দেয় এই গ্রামে। অনেক টুরিস্টদের তো এখান থেকেই শুরু হয় আল্পসের কোলে নানান হাইকিং রুটে হাঁটা। বর্তমানে এই গ্রামের প্রধান অর্থনীতি, ট্যুরিজমই বলা যায়। আথিতেয়তাকে কেন্দ্র করে কি ভাবে মা লক্ষ্মীকে আসন দিতে হয় তা বোধহয় সুইসরাই জানে।