ব্যস্ত শহুরে লিসবনের আঁচ পেতে, পর্তুগীজ রাজধানী শহরের জনস্রোতে হারিয়ে যেতে হলে অবশ্যই ডাউন টাউন লিসবন বা Baixa অঞ্চলের প্রধান স্কোয়ার ‘Praça do Comércio’ তে একবার পা রাখতেই হয়। ডাউন টাউন লিসবনের পাথরে বাঁধানো সমস্ত রাস্তা, অলি গলি এসে শেষ হয়েছে Tagus নদী তীরের প্রধান এই ব্যস্ত অঞ্চলে। ব্যস্ত লিসবনের সমস্ত ইলেকট্রিক ট্রামের তারের জাল এখানেই এসে মিলেছে, প্রতিটি ট্রাম এখানে এসেই দম নেয়, মোড় নেয় – তাই যে লিসবনের যে কোন ট্রামে চাপলে এই স্কোয়ারকে চিনে নিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। স্কোয়ারের শেষে প্রচুর স্থানীয় ও টুরিস্ট বাস এসে থামে। এখানে জনারণ্যে হারিয়ে যেতে যেতে শহুরে লিসবনের ছন্দ অনুভব হয়।
১৭৫৫ এর ভয়ানক লিসবন ভূমিকম্পের আগে প্রায় দু’শো বছর ধরে এই কমার্শিয়াল স্কোয়ারের চারদিকের ইমারতে পর্তুগীজ রাজ দরবার ও প্রাসাদ ছিল। সেই সময়ে এই স্কোয়ারের নাম ছিল Terreiro do Paço মানে Grounds of the Palace। ভূমিকম্পের পরে এই অঞ্চলের সমস্ত ইমারত নতুন করে তৈরি হয় ও পর্তুগীজ ব্যবসা বানিজ্যের এক কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হয় এই স্কোয়ার।
যদিও এই স্কোয়ারের নাম কমার্শিয়াল স্কোয়ার, কিন্তু এখানে চারিদিকে লিসবনের সমস্ত সরকারী অফিস কাছারি, ঐতিহাসিক স্থাপত্য যেমন ছড়িয়ে আছে, তেমনি এই স্কোয়ার ঘিরে ব্যবসা বানিজ্য কেন্দ্রও প্রচুর। অনেক বড় বড় সাজানো দোকান ঘিরে রেখেছে এই স্কোয়ারের চারিদিক। অতি অবশ্যই, স্কোয়ারের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে কাফে, রেস্টুরেন্ট, স্যুভেনিরের দোকান। স্কোয়ারের একদম মধ্যে Dom José এর ঘোড়ায় চড়া ব্রোঞ্জ মূর্তি ও স্কোয়ারের শেষে কারুকার্যময় এক বিশাল ঘড়ি স্তম্ভ নজরে পড়বেই।
এখানে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে পর্তুগীজ ইতিহাসের নিদর্শন। এই সেই স্কোয়ার যেখানে পর্তুগীজ রাজা রাজত্ব করে গেছে, ভূমিকম্প ধূলিসাৎ করেছে রাজ দরবার ও প্রাসাদ, আবার পর্তুগালের শেষ রাজাকে হত্যাও করা হয়েছিল এই স্কোয়ারের মাঝে। ভূমিকম্প যেমন ধ্বংস করেছে এই অঞ্চলকে তেমনি এই স্কোয়ারকে কেন্দ্র করেই নতুন ভাবে, নতুন স্বপ্নে গড়ে উঠেছে পর্তুগীজ মানুষের সভ্যতা, ব্যবসা, বানিজ্য, সংস্কৃতি। এখন এই স্কোয়ার এখানের মানুষের দৈনন্দিন কাজের মধ্যবিন্দু।
এই স্কোয়ারকে লিসবনের প্রানকেন্দ্রও বলা যায়। বিকেলের দিকে এখানে বসে নদীর হাওয়ায় মৃদু ঠাণ্ডার পরশ নিতে নিতে সময়কে বয়ে যেতে দেখি, দেখি লিসবনের ঐতিহাসিক ইমারতগুলির উপরে শেষ বেলার কমলা রোদের খেলা, পর্তুগীজ মানুষের ব্যস্ত চলাফেরা, ওদের ঘরে ফেরা।