যদিও ইউরোপের সাধারণ মুদ্রা ইউরো – কিন্তু, এখনো ইউরোপের সব দেশে ইউরো চলে না, এখনো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অনেক দেশ আছে, যারা নিজেদের মুদ্রাকে এখনো ইউরোতে পরিণত করে নি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নতুন সদস্য দেশ ক্রোয়েশিয়া, চেক-রিপাবলিক, লিথুনিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া এখনো তাদের পুরনো মুদ্রাই ব্যবহার করে চলেছে।
আবার এদিকে সুইজারল্যান্ডেও ইউরো চলে না – চলে সুইস ফ্র্যাঙ্ক, অবশ্য সুইজারল্যান্ড ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশ নয়। সুইস ভ্রমণের জন্যে দেশটিতে পৌঁছেই তাই ইউরোকে সুইস ফ্রাঙ্কে বদলে নিতে হয় – ট্রেন দিয়ে পৌঁছলে ষ্টেশনেই সুইস সরকারের মুদ্রা বদল করার অফিস থাকে, প্রাইভেট এজেন্সিও অনেক থাকে – কিন্তু সরকারী অফিস থেকেই মুদ্রা বদল করে নেওয়া ভালো – যদিও কোন কোন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ইউরো নেয়, কিন্তু, সুইজারল্যান্ডে ইউরো দিয়ে আদান প্রদান করলে অহেতুক বাড়তি খরচ হয়ে যায়।
আর এই মুদ্রা অর্থনীতিতে মুদ্রা বদল মানেই বাড়তি এক চার্জ দিতে হয় – তাই মুদ্রা বদল খুব হিসাব করে করাই ভালো – ঐ দেশে থাকা কালীন যা যা খরচ হতে পারে তার এক হিসাব থাকা ভালো। যাতে ঐ দেশ থেকে বেরিয়ে আসার সময়, হাতে আর ঐ দেশের কোন মুদ্রা না থাকে।
ভ্রমণের মূল মন্ত্র মনে হয় – অহেতুক খরচ না বাড়ানো। বিশেষ করে তো ইউরোপে, ইউরোপ ভ্রমণের সময়ে – মুদ্রা ও সময় দুইই খুব দামী, তাই সময় ও মুদ্রা – খুবই হিসাব করে খরচ করাই ভালো।
সেবার হাঙ্গেরিতে যা যা খরচ হতে পারে, তার একটা রাফ হিসাব করে ইউরো থেকে হাঙ্গেরির মুদ্রায় বদল করেছিলাম, সেবার আমাদের মুদ্রা বদলের সেই হিসাব এতোই সঠিক হয়ে গিয়েছিল – হাঙ্গেরি ছেড়ে দেওয়ার সময়ে, বাস স্টপে এসে দুপুরের খাবার কিনে সেই মুদ্রা গুলো শেষ হয়ে গিয়েছিল।
হ্যাঁ, সঙ্গে তো ক্রেডিট কার্ড থাকেই – ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বড় খরচ, যেমন হোটেল, ফ্লাইট বা ট্রেনের টিকিট কাটা ইত্যাদি তো হয়ে যায়, কিন্তু, স্থানীয় দোকানে যতটা পারা যায় ঐ দেশের মুদ্রায় নগদ লেনদেন করা ভালো।
একবার ইতালি থেকে তুলুসে ফিরে আসার সময়ে, ইতালির এক ছোট্ট দোকানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছিলাম – ফিরে এসে দেখি, কানাডা থেকে কেউ কিছু ইউরো তুলে নিয়েছে। তারপর তো সঙ্গে সঙ্গে কার্ড বন্ধ করার জন্যে ফরাসী পুলিসে রিপোর্ট করতে হয়েছিল।
তাই, পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলোয় স্থানীয় দোকানে ছোটখাটো কেনাকাটির সময় আমরা যতটা সম্ভব ক্যাশ ব্যবহার করতাম। অবশ্য ওরা ইউরোও নিত – কিন্তু, ইউরোতে একটু বেশী চার্জ করতো।
আর তাছাড়া, ইউরো দিয়ে কেনাকাটি করলে টুরিস্ট হিসাবে স্থানীয় দোকানে ঠকিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও আছে – তাই ইউরো দিয়ে লেনদেন করলে, ইউরো থেকে ক্রোনার, সুইস ফ্রাংক, হাঙ্গেরিয়ান মুদ্রা বা চেক ক্রাউন ইত্যাদি মুদ্রা বদলের সেই অংকটাকে মাথায় রেখে চলতে হয়। স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন করলে ক্রমাগত মুদ্রা বদলের সেই অংক কষার আর দরকার হয় না।
তবে, ঐ দেশ গুলোর মুদ্রা গুলো আগে থেকেই কিনে নেওয়ার দরকার নেই – ঐ দেশে পৌঁছে, এয়ারপোর্ট বা রেলওয়ে ষ্টেশনে সারি সারি এ টি এম এর যে কোন একটা থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে, ঐ দেশের মুদ্রা তুলে নেওয়া যায়। সেবার, দুভ্রভনিকে আমরা পৌঁছেছিলাম বেশ রাতের দিকে, এয়ারপোর্টে মুদ্রা বদলের কোন এজেন্সি ছিল না, এ টি এম থেকেই মুদ্রা বদল হয়েছিল।
অবশ্য, ইউরোপ ভ্রমণের সময়, সব সময়ই আলাদা করে কিছু ক্যাশ ইউরো সরিয়ে রাখা উচিত। কখনো কোন দেশে ক্রেডিট কার্ড কাজ না করতে পারে, এ টি এম কাজ না করতে পারে, ঐ দেশের স্থানীয় ব্যাংক বন্ধ থাকতে পারে – সেই সময়ে সেই সরিয়ে রাখা ক্যাশ ইউরো কাজে লেগে যেতে পারে – কথায় বলে সাবধানের মার নেই। হ্যাঁ, ভ্রমণের আরেক মূল মন্ত্র – সাবধানতা।