মানুষের অবচেতন মন ও অদ্ভুত স্বপ্নের সঠিক ছবিটি ঠিক কেমন হতে পারে, তা বোধহয় সালভাদর দালি ছাড়া অন্য কোন শিল্পী আগে কখনো কল্পনাও করতে পারেন নি। একটি ছবি – আপাত দৃষ্টিতে যার কোন মানে নেই, অদ্ভুত, কিম্ভূত, উদ্ভট, গোলমেলে ধাঁধাঁর মতো – তবুও শিল্প, তবুও ছবি, সেটাই বোধহয় সুর-রিয়েলিজমের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
কিন্তু, সেই উদ্দেশ্য হয়তো এতো অদ্ভুত ভাবে সফল হোতো না, শিল্পের মূল স্রোতে আসতো না – যদি না সালভাদর দালির সঙ্গে সুর-রিয়েলিজমের পরিচয় হোতো। আর, তারপর দালি যদি না সৃষ্টি করে যেতেন, একের পর এক কিম্ভূত শিল্প, একের পর এক মাস্টারপিস। ইউরোপিয়ান শিল্পের কাঠামোগত ভাবধারাকে বদলে দেওয়ার পেছনেও দালির যথেষ্ট অবদান ছিল।
সুর-রিয়েলিজম আসলে কি – প্রথমে দালি জানতেন না, তাই জন্মগত ভাবে অত্যন্ত প্রতিভাবান সালভাদর দালির প্রথম দিকের আঁকা ছবিতে, কিন্তু দালির সেই অদ্ভুত অবচেতন মনের কোন ছাপ ছিল না ।
কিন্তু, বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, যুবক সালভাদর দালি যখন শুনলেন, প্যারিসে André Breton এর অধীনে অধিবাস্তববাদ বা সুরিয়েলিজম আন্দোলনকে সাকার করতে, পরীক্ষামূলক ভাবে একদল শিল্পী অদ্ভুত, উদ্ভট, কিম্ভূত সব শিল্প সৃষ্টি করে চলেছে – যে সাধারণ মানুষ তাদের শিল্পকে কিছুতেই বুঝতে পারছে না – সালভাদর দালি সেখানে পৌঁছে গেলেন।
সালভাদর দালি Surrealism সঙ্গে পরিচিত হলেন – আর সেই Surrealism এর আবিষ্কারই সালভাদর দালির শিল্পকে এক নতুন খাতে বইয়ে দিল, দালির চিন্তা ধারা বদলে গেল – বলা যায়, তার শিল্পী জীবনের নবজন্ম হল। যুবক সালভাদর, সুর-রিয়েলিস্টিক শিল্পী দালিতে রূপান্তরিত হলেন। শুধু দালির জীবন ও শিল্পই বদলে যায় নি, সুররিয়েল আন্দোলনে যদিও দালি পরে এসেছিলেন, কিন্তু দালি সুররিয়েল আন্দোলনে যোগ দেওয়াতে যেন ওদের পালে হাওয়া লেগেছিল – প্যারিসের সুর-রিয়েলিস্টিকরা বুঝেছিলেন – ওরা ওদের নতুন চ্যাম্পিয়ান পেয়ে গেছে।
এখানেও কিন্তু, সুরিয়েলিজম শিল্প বিপ্লবের প্রধান প্রেরণা ছিল, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের অবচেতন মনের সাইকো-এনালিটিক্যাল থিয়োরি। এমনকি, André Breton প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত, মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত সৈনিকদের, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের সাইকো এনালাইসিস মেথড ব্যবহার করে সুস্থ করে তুলতেন।
যাইহোক, দালি ও, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের অবচেতন মনকে প্রকাশ করার থিয়োরিকে মনে প্রানে বিশ্বাস করে নিলেন – আর অবচেতন মনের আবেগকে মুক্ত করতে গেলে, প্রকাশ করতে গেলে, কোন না কোন মাধ্যম চাই, আর দালির হাতে ছিল তুলি, তাছাড়া, শিল্পীর কাছে অবচেতন মনকে প্রকাশ করার মাধ্যম, ক্যানভাস, রং, তুলি ছাড়া আর কি হতে পারে? দালিও তাই, ফ্রয়েডের থিয়োরি অনুযায়ী, তার অবচেতন মনের সমস্ত অস্থিরতাকে, আবেগকে রং তুলি দিয়ে, শিল্পের মাধ্যমে ক্যানভাসে মুক্তি দিয়ে যেতে শুরু করলেন।
চলবে
Dear Editor,
Thank you for your endeavor in publishing ABAKPRITHIBI. I found it as innovative and interesting works for our reader community.
Mohammad Sulaiman Khan
Executive Secretary
CREED.
Thank you for your encouraging comment.