ফরাসী পথের সঙ্গীত (Street performance, France)

Street performance, France (2)

প্রত্যেকটা দেশের মানুষের জীবন ধারণের, জীবন যাপনের এক অতি নিজস্ব ছবি আছে, আছে দৃশ্য, আছে হাসি, আনন্দ, জীবন দর্শনকে ব্যক্ত করার এক নিজস্ব প্রয়াস, নিজস্ব ভঙ্গি – যা নিতান্তই অভিনব – আর সেই দৃশ্য গুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুব ধীরে ধীরে বদলে যায়, জানি না, সেই বদল ভালোর দিকে, না মন্দের দিকে, তবুও সেই দৃশ্য গুলো বদলায়, মানুষও সেই দৃশ্যের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় – বদলায় না শুধু শহরের ঐ ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলো, পাথরে বাঁধানো প্রাচীন গলির চরিত্র, সামারের হলুদ উদাসীন মন কেমনের দুপুর গুলো, রক্তিম বিকেল গুলো, তুষার শীতল সন্ধ্যে গুলো।

গত কয়েক বছর ধরে তুলুস কে নানা রূপে দেখেছি, তুলুসের প্রতিটি গলির মোড় ও স্কোয়ারের গন্ধ ও সুর গুলোকে জেনেছি ধীরে ধীরে। তুলুস, অবশ্য শুধু তুলুস কেন, ফ্রান্সের প্রত্যেকটি জায়গারই, দেখেছি এক সুর আছে, আছে নিজস্ব এক সুবাস – আছে বৃষ্টির সুবাস, বুনো ঝোপে ফুটে থাকা ফুলের মিষ্টি সুবাস, তুষারপাতের সুবাস – আর সুর, সুবাস, সব মিলিয়ে ফরাসী জীবন যাত্রার ছবি গুলো তৈরি হয়।

আবার দেখেছি, গ্রামের দিকের ফরাসীরা যেন যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে জানে না, আজকের আধুনিক গতিময়তা যখন সমস্ত সুর ছন্দের কথা ভুলিয়ে দিয়ে, শুধুই ব্যস্ততা, ও অতি সক্রিয়তা উপহার দেয়, ফ্রান্সের গ্রাম ও শহরের রাস্তা ও বাজারের এই সঙ্গীত শিল্পীরা যেন সুরের সেই অনাদি তাল লয়ের আশ্চর্য মহিমাকে মনে করিয়ে দিতেই রাস্তার পাশে বাজাতে ভালোবাসে।

যাওয়া আসার পথে পথচারীদের দৈনন্দিকতাকে একটুকরো সুরের ঝংকার, সুরের মাধুর্য উপহার দিতে ভালোবাসে – আর কেউ যদি বা খুশী হয়ে এক দুই ইউরো দিয়েই দেয় – ক্ষতি নেই, সুর ভালোবাসার নজরানা বলা যায়। সুর বাজানোই এদের মুখ্য উদ্দেশ্য – স্ট্রীট পারফর্মেন্স। আর এই বাজনা বাজানোর দলের মুখ গুলোও বদলাতে থাকে।

Street performance, France (1)

জানি, সামারের এক নির্জন হলুদ দুপুরে, যে লোকটি গাছের ছায়ায় একলা নির্জনে বসে বাঁশি বাজিয়ে চলেছিল, কিংবা, রেভেল গ্রামের রবিবারের বাজারের ঐ দম্পতী – যারা সেদিন একমনে বাজারে আসা মানুষদের জন্যে সুরের এক মায়াজাল তৈরি করেছিল, যাদেরকে ঘিরে অনেক শ্রোতা ছিল – হয়তো, বেশ কয়েক বছর পরে আবার সেই জায়গায় গেলে অন্য কাউকে বাজাতে দেখবো।

তুলুস বসবাসের একদম প্রথম দিকে, আমাদের ছোট্ট এপার্টমেন্টটি ছিল একদম সিটি সেন্টারে, আর সেই এপার্টমেন্টের নীচেই, গলির মোড়ে বসে, প্রতিদিন একজন একমনে Accordion   বাজাতো – সামারের সন্ধ্যায় সেই সুর ছড়িয়ে পড়ত আমাদের ছোট্ট ঘরে – সেই সুর যেন ফরাসী উপায়ে, জীবনকে, পৃথিবীকে গোলাপি কাঁচের চশমা দিয়ে দেখতে শেখার আহ্বান জানাতো। আর, ফরাসী পথের ঐ টুকরো ছবি, টুকরো সুর যেন জীবনকে ভালবাসতে, বর্তমানকে মর্যাদা দিতে শেখায়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s