মোজার্ট যখন চকোলেট (Mozartkugel or Mozart ball)

মোজার্ট ওদের স্বপ্ন চারণে, ওদের অবচেতনে, মোজার্টকে ওরা খায়, মাথায় মাখে, কানে শোনে, বাজায়, মোজার্ট নিয়ে বাঁচে, মোজার্ট নিয়ে বলে – মোজার্টকে নিয়ে অষ্ট্রিয়ার মানুষ আরও কি কি করতে পারে, তা ভিয়েনা বা মোজার্টের জন্ম শহর সেলজবার্গে গেলে বেশ ভালো ভাবে বোঝা যায়।

আমরা তো মোজার্টকে সুর সঙ্গীতের স্রষ্টা বলেই জেনে এসেছিলাম, কিন্তু, এখানে, মোজার্ট শুধু যে সুর সঙ্গীতেই সীমাবদ্ধ আছে তা নয় – অষ্ট্রিয়ায়, মোজার্ট এক ব্র্যান্ড, এক ইন্ডাস্ট্রি, মোজার্টকে কেন্দ্র করে আজকের পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে।

কিন্তু, মোজার্ট ব্র্যান্ডটির প্রতি বিদেশী টুরিস্টদের আকর্ষণ বলে, যখন ন্যাপকিন ও টিস্যু পেপারেও মোজার্টের ছবি ও তার সুরের নোটেশন আঁকা দেখি, ব্যপারটাকে একটু বেশী বাড়াবাড়ির পর্যায়ে বলে মনে হয়। দোটানায় পড়ে যাই – মুখ মুছে, মোজার্ট টিস্যু পেপারটি ফেলে দেবো না সঙ্গে নিয়ে যাবো, বুঝে উঠতে পারি নি। অবশ্য, শুনেছি, জাপানের অনেকেই ন্যাপকিন পেপারটিকেও সুভেনিরের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

সে যাই হোক, সেলজবার্গ ও ভিয়েনার প্রায় প্রতিটি সুভেনিরের শপে যে মোজার্ট চকোলেট গুলো পাওয়া যায় – তা সত্যিই মোজার্টের প্রিয় চকোলেট ছিল কিনা সে নিয়ে প্রচুর দ্বন্দ্ব, মতবিরোধ, প্রচলিত কৌতুক থাকতে পারে – কিন্তু, আমরা যারা বাইরে থেকে ওদের দেশে বেড়াতে যাই, বেশ নিষ্ঠা সহকারেই মোজার্ট চকোলেট কিনি – কামড় দিই, স্বাদ বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি।

মোজার্টের মুখ আঁকা সোনালি মোড়ক দিয়ে মোড়ানো চকোলেটটি পেস্তা বাদাম, চিনি ও চকোলেটের সংমিশ্রণে এক ধরণের চকোলেট বল, অন্যান্য সাধারণ চকোলেট থেকে অনেকটাই আলাদা, একটু বেশী মিষ্টি ও অদ্ভুত স্বাদ ও গন্ধ। অবশ্য, সবসময়ই যে মোজার্ট চকোলেট বল হিসাবে পাওয়া যায় তা নয় – অন্যান্য আকারেও দেখা যায়, তবে গোলাকারই বেশী দেখা যায়।

এই মোজার্ট চকোলেট তৈরির গল্পটা শুরু হয়েছিল বহু আগে – ১৮৯০ সালে, যখন সেলজবার্গের Paul Fürst প্রথম চকোলেটটি তৈরি করে, নাম দিয়েছিল – Mozartkugel  অনেকেই পছন্দ করে ফেলেছিল – বিশেষ করে যারা বাইরে থেকে সেলজবার্গে যায়, তাদের কাছে তো Mozartkugel এক সুভেনিরই ছিল।

তাই, ধীরে ধীরে Mozartkugel  এর কথা ছড়িয়ে পড়েছিল – ও এই চকোলেটের চাহিদাও বাড়তে শুরু করেছিল – তখন মোজার্ট চকোলেট ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা খুবই দরকারি ছিল – তাই, নানান ব্যবসায়ী ও কোম্পানি, এমনকি নামী কোম্পানিও মোজার্ট চকোলেট তৈরি ও বিক্রির বাজারে ঢুকে পড়েছিল। আর, এখন, মোজার্ট চকোলেট অষ্ট্রিয়ার জাতীয় সংস্কৃতি ও অর্থনীতির এক অঙ্গ হয়ে গেছে। আর Paul Fürst  এর তৈরি চকোলেটের বোধহয় এর চেয়ে আন্তর্জাতিক ও সর্বজনগ্রাহ্য নাম আর হতে পারতো না।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Austria, Europe, Travel, Western-Europe and tagged , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s