জংফ্রু পাহাড়ের নীচে, পাহাড়ি উপত্যকার কোলে নির্জন এই সবুজ সুইস গ্রাম Stechelberg, এখানে এসে প্রথমেই পাহাড়ি ঝর্ণার শব্দ কানে আসে, বৃষ্টির ঠিক পরে পরেই নাকি আরও বেশী পাহাড়ি ঝর্ণার শব্দ শোণা যায়, তখন আরও প্রচুর নতুন ঝর্ণার সৃষ্টি হয়।
চারিদিক থেকে উঁচু উঁচু তুষার ধবল খাড়া পাহাড়, ঝর্ণা, তুষার ধবল পাহাড় চূড়া এই গ্রামের দৃশ্যপটকে ঘিরে রেখেছে – অদ্ভুত প্রাকৃতিক নির্জনতা এখানে – যেন ব্যস্ত ঘড়ির কাটা থমকে আছে, আর সেই জন্যেই মনে হয় এই ছোট্ট সুইস গ্রাম ইউনেস্কোর হেরিটেজ।
মাঝ ফেব্রুয়ারির সকালে যখন এই সুইস গ্রামে পৌঁছলাম খাড়া খাড়া পাহাড়কে কুয়াশা ও সাদা মেঘেরা জড়িয়ে ধরে বৃষ্টি আনার তোড়জোড় শুরু করেছে, ভুল করে হালকা এক দু’ ফোঁটা বৃষ্টি ঝরিয়েও দিয়েছে। আবার কখনো হালকা মেঘেরা নীচে নেমে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে নিঝুম সবুজ সুইস গ্রামটিকে।
এখানে এসে চুপ করে চারিদিকের অপূর্ব পাহাড়ি সৌন্দর্যে ডুবে যেতে হয়, পাহাড় চূড়ায় মেঘেদের চঞ্চল ঘোরাফেরা দেখতে হয় – প্রতিটি মুহূর্তে এখানে নতুন নতুন ছবি তৈরি হয়, প্রকৃতির দৃশ্যপট যে কতো সজল, চঞ্চলা হতে পারে, তা ফেব্রুয়ারির সুইজারল্যান্ডকে না দেখলে হয়তো বিশ্বাস হোতো না।
এই গ্রাম থেকে Aerial tramway দিয়ে আরও উপরের সুইস আল্পাইন গ্রাম গুলো, যেখানে গাড়ি চলাচল করে না, সেখানে যাওয়া যায়। যদিও বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই গ্রামের অর্থনীতি পশুপালন কেন্দ্রিক, বর্তমানে পশুপালন ও ট্যুরিজম দুইই এদের অন্যতম ব্যবসা। দূরের ছোট্ট ছোট্ট কাঠের বাড়ী গুলো আসলে এক একটি ছোট ছোট হোটেল – প্রকৃতির সৌন্দর্যকে সম্পূর্ণ ভাবে বজায় রেখে ব্যবসা বানিজ্য চালানো বোধহয় সুইসদের থেকে বেশী আর কেউ জানে না।
যাইহোক, এতো সকালে কেবল কারের চলাচল শুরুই হয় নি, তাই আরও উপরের গ্রামে যাওয়ার জন্যে অপেক্ষা যখন করতেই হবে, এই গ্রামকে একটু দেখে নিতে তো কোন বাধা নেই। এই গ্রাম থেকে সামনের পাহাড়ি পথে হেঁটে যাওয়ার জন্যে প্রচুর ছোট ছোট পাহাড়ি রাস্তা আছে, যে কোন এক রাস্তা ধরে একটু হাঁটলেই অপূর্ব সুইস সৌন্দর্যের সম্মুখীন হতে হয়। শুরু হল পথ চলা, কুয়াশা, মেঘ ও বৃষ্টির চঞ্চল খেলার মধ্যে যতদূর চলা যায় আর কি। আমাদের সেই দিনের পাহাড়ি পথ চলাকে, চারিদিক থেকে সজল প্রকৃতি, উঁচু উঁচু সুইস পাহাড়, হাজার ঝর্ণা, পাগলা ঝোড়া ছোট্ট নদী, উদার সবুজ মাঠ ভরিয়ে রেখেছিল, সাজিয়ে রেখেছিল।
কেবল কারে চড়ে যখন আরও উপর থেকে এই ছোট্ট সুইস গ্রামকে দেখলাম অপূর্ব সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে গেল, সুইস পাহাড়ের উপত্যকার ছোট্ট গ্রামে তখনো সকালের আলস্য জড়ানো ছিল, জড়ানো ছিল প্রকৃতির স্নেহ, মেঘের হালকা চাদর। ছবির মতো সাজানো সুইস গ্রামটি যেন আমাদের জীবন পথের এক স্মরণীয় মুহূর্তের এক অপূর্ব ছবি এঁকে দিয়েছিল।
চোখ জুড়ানো ছবি।
সত্যিই চমৎকার!
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
ধন্যবাদ। আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই, ভালো থাকবেন।