তালিনে কি দেখি – এক (Tallinn Town Hall, Estonia)

ঐতিহাসিক শহর তালিনে ঢোকার প্রধান দরজা দিয়ে শহরের ভেতরে ঢুকে সামনেই দেখা যায় তালিনের বিখ্যাত টাউন হল ও টাউন স্কোয়ার – শেষ বিকেলের কমলা আলো তালিনের টাউন হলের সুউচ্চ চূড়ায় পড়েছে, যেন সেজে উঠেছে। খুব মন দিয়ে টাউন হলের চূড়াটি লক্ষ্য করলে, একদম চূড়ায় এক ছোট মূর্তি দেখা যায় – প্রাচীন যোদ্ধার মূর্তি, স্থানীয়রা ওকে Old Thomas বলে, ষোল শতাব্দীর শুরুর দিকে ঐ মূর্তিটি তৈরি হয়েছিল, আজও সে টাউন হলের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়। মূর্তিটি তালিনের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নীচে টাউন স্কোয়ার টুরিস্ট ও স্থানীয় মানুষের সান্ধ্য জমায়েতে জমজমাট। সাধারণত এই টাউন হল স্কোয়ারে তালিনের দৈনন্দিন বাজার বসে – টুরিস্টদের জন্যে সুভেনির থেকে শুরু করে, খাওয়া দাওয়া, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, যাবতীয় দরকারি জিনিসের ঠিকানা এই টাউন স্কোয়ার।

তালিনের টাউন হলটি দেখতে অনেকটাই সাধারণ বলে মনে হয়, অন্তত ইউরোপের অন্যান্য জায়গার তুলনায় সাধারণই বলা যায়, কিন্তু, তালিনের এই সাদা রঙের টাউন হলটি ইউরোপের বাল্টিক অঞ্চল ও স্ক্যন্ডানেভিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো টাউন হল। কিছুদিন আগেই এই টাউন হলের ছয়শো বছর পূর্ণ হল, টাউন হলের সেই জন্মদিন নাকি ইস্টোনিয়ানরা মহা ধুমধামের সঙ্গে পালন করেছিল। এমনকি, ২০০৫ এ উত্তর ইউরোপের সবচেয়ে সুরক্ষিত ঐতিহাসিক গথিক নিদর্শনের দ্বিতীয় পুরস্কারও এই টাউন হলের দখলে ছিল।

তাই, তালিনের এই টাউন হলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ইউনেস্কোও তাই এই টাউন হলকে হেরিটেজ ঘোষণা করতে দ্বিধা করে নি। এই টাউন হলের ভেতরে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছরের পুরনো এক কার্পেট তালিনের এক অমূল্য সম্পদ – পুরনো সেই কার্পেটে রাজা সলোমনের জীবন কাহিনী আঁকা।

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় সেই ঐতিহাসিক কার্পেট বাঁচাতে কার্পেটটিকে মস্কো নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। টাউন হলের ঐ কার্পেটটি শহরবাসীর এতোই প্রিয় ছিল যে, একবার যখন ঘোষণা করা হল, ঐ ঐতিহাসিক কার্পেট বিক্রি করে ঐ অর্থ দিয়ে ইস্টনিয়ার মানুষের জন্যে স্কুল বা হাসপাতাল খোলা হবে – স্থানীয়রা কিছুতেই তা মেনে নিতে পারলো না, তাই কার্পেটটি আর বিক্রি হল না।

সুইডেনের Royal Institute of Technology র অধ্যাপক Hellers এর মতে, প্রাচীন ঐ কার্পেটে আঁকা রাজা সলোমনের জীবন কাহিনীর মধ্যে নাকি মধ্যযুগীয় ইউরোপের এক রাজনৈতিক সংকেত লুকনো ছিল, যেখানে ইস্টোনিয়াকে ইউরোপের অন্তর্গত হওয়ার আহ্বান করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে নেদারল্যান্ডে যখন কার্পেটটি তৈরি হয়েছিল, সেই সুক্ষ সংকেত তখনই আঁকা হয়েছিল, আর রাজা সলোমন ছিল সেই সংকেতের কেন্দ্র।

গত শতাব্দীর দুই বিশ্ব যুদ্ধেও এই টাউন হল স্কোয়ার ও টাউন হল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে বর্তমানে এই টাউন হল স্কোয়ার তালিনের হৃদস্পন্দন। আর প্রাচীন সেই শহরে প্রানের ছোঁয়া পেতে হলে তালিনের এই কেন্দ্রে আসতেই হয়, টাউন হলের পেছন দিয়ে যে রাস্তা চলে গেছে ‘Raekoja tänav’ সেই পথ ধরে এগিয়ে যেতে হয় – দেখতে হয় এই ঐতিহাসিক শহরের জীবনের ছবি।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Estonia, Europe, Northern-Europe, Travel and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s