ফ্রান্সে কেউ বলে প্যারিসকে সম্পূর্ণ ভালো করে দেখতে হলে দুপুরে সিয়েন নদীর বুকে বোটে ভেসে ভেসে দেখতে হয়, আবার কেউ বলে না না, দিনে নয় – সিয়েনে ভেসে রাতের আলোকিত, অপূর্ব প্যারিসকে দেখা উচিত। কিন্তু, কেউ বলে দেয় নি, সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণে সিয়েনের বুকে ভাসা উচিত কিনা, সিয়েনে ভাসতে ভাসতে প্যারিসের বুকে নিঝুম সন্ধ্যা নামা দেখা উচিত কিনা – সে আমাদেরকেই জেনে নিতে হলো।
শেষ বিকেলে সন্ধ্যার ঠিক আগে যখন আইফেল টাওয়ারের পেছনে সিয়েনের ওপাশে পশ্চিম আকাশ রাঙিয়ে সূর্য অস্ত যাচ্ছিল, যাত্রীর অপেক্ষায় এক বোট রেস্টুরেন্ট সিয়েনের ঘাটে অপেক্ষা করছিল। একে একে যাত্রী বোঝাই হলে, মানে বোট রেস্টুরেন্টের সমস্ত বসার জায়গা পূর্ণ হয়ে গেলে বোট ভেসে পড়ল নদীপথে। জল কেটে কেটে ধীরে ধীরে বোট এগিয়ে চলল – একে একে দু’ পাশে প্যারিসের সমস্ত মনুমেন্ট পেরিয়ে যাবে বোট, কিন্তু চলার ছন্দে কোন তাড়া নেই।
সন্ধ্যার ঠিক আগে প্যারিসের মতো বড় শহরের সমস্ত ব্যস্ততাকে একপাশে সরিয়ে রেখে সিয়েনের বুকে যেন এক অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করে, শেষ অক্টোবরের হাওয়া সিয়েনের জোলো হাওয়ার ছোঁয়ায় আরও ঠাণ্ডা হয়েছে, তবুও বোট রেস্টুরেন্টের ছাদে দাঁড়িয়ে প্যারিসকে দেখার রোমাঞ্চে বাধা নেই।
প্যারিসে সন্ধ্যা নামে, এক আলোকিত সন্ধ্যা, চারপাশের সমস্ত ঐতিহাসিক স্থাপত্যে আলো জ্বলে ওঠে – মুহূর্তের জন্যে সময় যেন স্তব্ধ হয় – নদীর বুকে ভেসে আগে তো কখনো কোন শহরের বুকে সন্ধ্যা নামা দেখিনি, এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়, আশেপাশের সমস্ত টুরিস্ট খুবই নীরবে, সসম্মানে সন্ধ্যাকে বরণ করে নেয়।
নদী পথে যেতে যেতে দেখি আলোকিত আইফেল টাওয়ার যেন ঝুঁকে পড়েছে – সিয়েনের কালো জল কেটে বোট এগিয়ে চলে, ভেতরে ততক্ষণে খাবার দেওয়া শুরু হয়ে যায়, শুরু হয়ে যায় ফরাসী গান ও মিউজিক। সিয়েনের বুকে ভাসমান বোটে টুরিস্টদের জন্যে সুরে, সুখাদ্যে, সুদৃশ্যে প্যারিস সন্ধ্যাকে স্মরণীয় করে রাখার সমস্ত ব্যবস্থা পাকা।
প্যারিসের স্ট্যাচু অফ লিবার্টি পেরিয়ে নদী পথে অনেকটা দূর গিয়ে বোট, ফেরার পথ নেয়, সিয়েনের বুকে এক ছোট্ট দ্বীপে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির উপস্থিতি দেখে আমাদের মতো অন্য অনেক টুরিস্ট বিস্ময় প্রকাশ করতে, পাশ থেকে এক জন বলে উঠল – আমেরিকার স্ট্যাচু অফ লিবার্টি কিন্তু আমেরিকাকে ফ্রান্সের উপহার। একটা স্ট্যাচু অফ লিবার্টি এখানে স্থান পেয়েছে।
যাইহোক, জীবনে কতো সন্ধ্যাই তো আসে, কোন সন্ধাকে এমন করে মনে করি? জীবনের কোন কোন সন্ধ্যাকে সারা জীবন মনে রাখার এই আয়োজন টুকু নেহাত মন্দ নয়। তাই, আমরা বলব, প্যারিসকে দেখতে হলে সন্ধ্যার আগে সিয়েনের বুকে বোটে করে ভাসতে হয়, ভাসতে ভাসতে নদী পথে প্যারিসের সন্ধ্যা নামা দেখতে হয়।
Darun laaglo chhobigulo…bhishon sundor…loved the narrative as well… :-0
dhonybad, bhalo legeche jene khushi holam. bhalo thakben…
🙂 **
চমৎকার কথামালায় প্যারিসের দারুণ কিছু ছবি। অনেক ভাল লাগলো।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
ধন্যবাদ, ভালো লাগল জেনে আনন্দিত হলাম। আপনাকেও শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থাকবেন।
Excellent