জীবনের বেশীর ভাগ সময়, প্রায় ত্রিশ বছর, একটা কংক্রিটের বাক্স কিনে ঋণ শোধ দিতে দিতে চুলে রুপোলী রেখা দেখা দেয়, সঙ্গে রক্তে বাড়ে চিনির পরিমাণ, তাই বছর শেষে ডাক্তারের ভাগেও উপার্জনের এক মোটা অংশ চলে যায়, রাতের ঘুম উড়ে যায় – শহুরে জীবনে বাড়ে উৎকণ্ঠা, বাড়তেই থাকে। সভ্যতা যেন মানুষকে উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা করতেই শিখিয়েছে, শিখিয়েছে জটিল হতে। জীবনকে সহজ করতে গিয়ে, জীবনকে সুখী করতে গিয়ে, জীবন আরও আরও জটিল হয়ে ওঠে – তখন জীবনকে ‘জটিল’ ‘কঠিন’ বলেই আখ্যা দি। অথচ, সত্যিই কি জীবন জটিল, জীবন কঠিন?
অন্তত, থাইল্যান্ডের Pun Pun Center for Self-reliance এর প্রতিষ্ঠাতা Jon কিন্তু জীবনকে সহজ বলেই জানেন। তার মতে, সভ্যতা আমাদের শিখিয়েছে কি ভাবে চাষের জমিতে কংক্রিটের পাহাড় তুলতে হয়, জমিতে বিষ দিতে হয়, পরিবেশ দূষণ করতে হয়, পৃথিবীর সবুজ অস্ত্বিত্বকে সংকটের মুখে ঠেলে দিতে হয় – কিন্তু, মানুষের জীবনকে সহজ করতে শেখায় নি, বরং এক দৌড়ের মাঝে ঠেলে দিয়েছে।
শহরের কোণে একটা বাড়ী তৈরি করতে মানুষ সারা জীবন খেটে যায়, জীবনের উদ্দেশ্য কি সত্যি তাই? আমরা বড় অস্থায়ী, জাগতিক জিনিসের মধ্যে নিজের সুখ, দুঃখ জড়িয়ে ফেলি, কিন্তু, যখনই তা পাওয়া যায় সেই পাওয়ার মূল্য ফিকে হয়ে যায় – আরও আরও পাওয়ার মধ্যে জীবন জড়িয়ে ফেলি, জীবনকে আরও জটিল থেকে জটিলতর, ক্লান্তিকর করে তুলি। শেষে মনে হয়, এই জন্যেই কি পৃথিবীতে এসেছি? – এমনি নানান প্রশ্ন যখন Jon কে জড়িয়ে ধরছিল, Jon শহর থেকে গ্রামে ফিরে গিয়ে সহজ জীবনের খোঁজ শুরু করল।
তার পূর্বপুরুষরা যে ভাবে চাষ করে জীবন যাপন করত, তেমনি করেই শুরু করল তার সহজ জীবনের যাত্রা। কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে পেল, একদিন যে সহজ জীবনের খোঁজে সে গ্রাম থেকে শহরে গিয়েছিল, সেই সহজ জীবন তার গ্রামেই আছে, তার হাতে আছে প্রচুর সময়। শহরে থাকাকালীন, উদয়াস্ত কাজ করেও সে কখনো ভাবে নি, সে একটা নিজের বাড়ী তৈরি করতে পারবে, কিন্তু গ্রামে ফিরে গিয়ে দেখল, সে অতি সহজে বাড়ীও তৈরি করে ফেলল। সবই সহজ বলেই মনে হল – জীবনকে একটু অন্যভাবে দেখলে জীবন সত্যি খুব সহজ। জীবন মানে থেকে যাওয়া, রয়ে যাওয়া, মানুষের চিন্তার মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়া – সে যেমন করেই হোক। তাতেই বোধহয় মানুষের জীবনের সুখ লুকিয়ে আছে।