June 2012, Malaga, Spain
তুলুসে গরমের ছুটি পড়ে গেছে, শহর খালি করে সবাই ছুটি কাটাতে চলে গেছে ইউরোপের নানান দিকে।
আমাদেরও খুব তাড়াতাড়ি ছুটিতে বেড়ানোর প্ল্যান হয়ে গেল। এবার যাব স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চল – মালাগা, সেভিলা আর গ্রানাডা।
মালাগা শহরে মেডিটেরিয়ান সমুদ্রের আবহাওয়া, বাতাসে নোনা স্বাদ। গরমের সময় এখানে টুরিস্টের ঢল নামে মেডিটেরিয়ানের জলে গা ভাসাতে। সমুদ্র ঘেরা এই সুন্দর নোনা শহরের হাতছানি কি সহজে এড়ানো যায়?
মালাগা শহর যেমন ঐতিহাসিক তেমনি আধুনিক। আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম বেশ সকালেই।
প্রথমেই পৌঁছে গেলাম শহরের মাঝে পাহাড়ের উপরে 11th century তে তৈরি মুরিস সাম্রাজ্যের নিদর্শন আল্কাজাবায় (Alcazaba)।এখান থেকে শহরের দৃশ্য খুব সুন্দর।
আল্কাজাবা প্রাসাদের ভেতরে সুন্দর সাজানো ফুলের বাগান। পাথরে বাঁধানো রাস্তা ধরে রাজ প্রাসাদের সমস্ত ঘর আবিষ্কার করলাম। ঘর গুলোর দেওয়াল পাথরের।
এবার যাব কাস্তিলো দে জিব্রালফারো (Castillo de Gibralfaro), মুরিস সাম্রাজ্যের আরেক নিদর্শন। পাহাড়ের উপরে এই প্রাসাদ। শহর থেকে দেখা যায় জিব্রালফারোর চূড়া, উঁচু দেওয়াল।
উপরে চড়ার জন্য ঢালু বাঁধানো রাস্তা আছে, আবার বাস ও আছে। বাস একদম জিব্রালফারোর মুখে ছেড়ে দেবে মাত্র আট মিনিটে, আর চড়তে লাগবে প্রায় আধ ঘণ্টা। বেড়াতে হলে সময় বাঁচাতে হবে- অগত্যা বাস নিয়েই পৌঁছে গেলাম জিব্রালফারো।
জিব্রালফারো থেকেও মালাগা শহরের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। এই দিকটা আল্কাজাবার উল্টোদিকে, সমুদ্রের দিকে, তাই শহরের দৃশ্য খুবই সুন্দর। এখান থেকে বন্দরের জাহাজদের আনাগোনা দেখা যায়। এক্ষুনি এক বিশাল জাহাজ বন্দর ছাড়ল, পাড়ি দিল মাঝ সমুদ্রে।
উদার নীল দিগন্তের দিকে চোখ চলে যায়। ঝকঝকে রোদ, চকচকে সমুদ্রের নীল জল, নীল আকাশ, ফুরফুরে মন। হঠাৎ দিগন্ত থেকে উঠে আসা এক রাশ কালো মেঘের মতো কুয়াশা চারিদিক আবাছা করে দিল। প্রথমে দিগন্ত, পরে পুরো মালাগা শহর এই কুয়াশায় আছন্ন হয়ে গেল। শুনেছি এই ধরনের কুয়াশা এখানের আবহাওয়ার অদ্ভুত এক বৈশিষ্ট্য। প্রায়ই নাকি এমন হয়, কিছুক্ষণ পরেই আবার চারিদিক পরিষ্কার হয়ে যাবে।
দিগন্তই ঢেকে গেল, তাই আমরা জিব্রালফারো প্রাসাদের ভেতরের বাগান এবং মিলিটারি মিউজিয়ামের দিকে নজর দিলাম। ছোট মিউজিয়াম, এই দুর্গ যখন যাদের দখলে ছিল তাঁদের অস্ত্র সস্ত্র রাখা এই মিউজিয়ামে।
তাড়াতাড়ি মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে দেখলাম সত্যি কুয়াশা প্রায় কেটে গেছে, দিগন্ত অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে।
এবার আমাদের নামার পালা। এবার আর বাস নয় সেই ঢালু বাঁধানো জঙ্গলঘেরা রাস্তা ধরে চারিদিকের দৃশ্য দেখতে দেখতে নেমে আসা।
শহরের মাঝে The Cathedral of the Encarnation দেখে, শহরের রাস্তা ধরে হেঁটে চললাম। চারিদিকে ছড়ানো ইতিহাসের নিদর্শন। শহরের মাঝ বরাবর এক সুন্দর পার্ক।
এবার যাব শহরের আরেক প্রান্তে, সমুদ্রের ধারে। আকাসিয়াস সি বীচে। সি বীচ জমজমাট। সি বিচের যা যা উপাদান সবই আছে এখানে।
এখানে এখন Sardines মাছের সময়। ঝাঁকে ঝাঁকে Sardines এই সময় ধরা হয়। সমুদ্রের ধারে সারি সারি রেস্টুরেন্টের সেফরা এই সময় রেস্টুরেন্টের বাইরে Sardines গ্রিল করে। এই সময়ের এটাই বৈশিষ্ট্য এখানের সি বীচের।
বিশাল বোটে কয়লার আগুনে Sardines গ্রিল হচ্ছে। গন্ধে চারিদিক ম ম করছে, গন্ধেই খিদে পেয়ে যায়। তাছাড়া দুপুর ও হয়েছে, ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত।
গ্রিলড Sardines অর্ডার দিয়ে দিলাম। এখানের স্প্যাশাল ব্রেড অলিভ ওয়েল দিয়ে আর লেটুস পাতা, অলিভ, টুনা মাছ, টোম্যাটো, পেঁয়াজ ইত্যাদি দিয়ে এক স্যালাদ আর সঙ্গে গ্রিলড Sardines লেবু দিয়ে, নুন ছিটিয়ে পরিবেশন করল। অপূর্ব খেতে, সেই স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে।
লাঞ্চ শেষে আবার শুরু হল সি বীচে হাঁটা। আবার সেই মিষ্টিক কুয়াশা সমুদ্রের উপর থেকে ধেয়ে এল, এবার অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি কুয়াশা কেটেও গেল।
এবারের উদ্দ্যেশ্য মালাগুয়েটা সি বীচ। হাজার টুরিস্ট এখানে বার বার ফিরে আসে উষ্ণ মেডিটেরিয়ানের টানে। সাঁতার কাটে মেডিটেরিয়ানের জলে।
দিন শেষ হয়ে আসছে, আমাদের এবার ফিরতে হবে। সেভিলা যেতে হবে। মিষ্টিক মালাগা কে পেছনে ফেলে আমাদের বাস ছুটে চলেছে সেভিলার দিকে।
beauty lies in simplicity………well crafted story…