October 2012, Scandinavia
বহুদিন ধরে দিকশুণ্য পুর খুঁজে চলেছি, প্রায়ই ভাবি এই সংসারের ব্যাস্ততা থেকে বহু দুরে চলে যাই কিন্তু দিকশুণ্য পুরের ঠিকানা জানা ছিল না।
অথচ জীবনের পথে চলতে চলতে হঠাৎ যে একদিন দিকশুণ্য পুরের ঠিকানা পেয়ে যাব ভাবতে পারিনি।
সুযোগটা চলে এল হটাৎ-ই। আমাদের ইউনিভারসিটি জীবনের বন্ধু কিরণ আর সুস্মিতা, এখন ওরা স্বামী-স্ত্রী, থাকে সুইডেনের গতেনবারগে। কিরণ বহুদিন ধরে বলে চলেছে – চলে আয় এখানে বেড়াতে কিন্তু সময় আর সুযোগ পাওয়া মুশকিল ইত্যাদি বলে আমাদের আর যাওয়া হয়ে উঠছিল না।
এখানে সামার পরে গেছে, অগাস্টের এক শনিবারের অলস দুপরে কিরণের ফোন, “এবার কিন্তু তোদের এখানে আসতেই হবে, টিকিট দেখ।” ওর গলার আমন্ত্রনের জোর আর এড়ানো গেল না, বসে গেলাম দু’জনেই ল্যাপটপের সামনে তুলুস থেকে গতেনবারগের সস্তার টিকিট খুঁজতে।
কিরণের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সেই দিনই ফ্লাইটের আর ট্রেনের সমস্ত টিকিট কাটা হয়ে গেল। এবার দিন গোনা আর ব্যাগ গোছানো। ইউরোপে বেড়ানোর প্ল্যান করতে ভাস্কর একদম সিদ্ধহস্ত। ইন্টারনেট ঘেঁটে ধৈর্য ধরে পড়াশোনা করে বেড়ানোর পরিকল্পনা করতে ও খুব ভালবাসে। কোপেনহেগেন, স্টকহোম আর গথেনবারগ- স্ক্যান্দ্যানাভিয়ার এই তিনটে শহর দেখার প্ল্যান হল। তা ছাড়া গথেনবারগে কিছুদিন থেকে আরচিপিলাগো র দ্বীপ গুলো আবিষ্কার করবো ।
যাইহোক, কিরণ আর সুস্মিতাও আমাদের যাওয়ার টিকিট কাটা হয়ে গেছে শুনে খুব খুশি হল। ওদেরও দিন গোনা শুরু হল।
এই দিনগোনার মাঝে মাঝে কিরণ আর সুস্মিতার ঠাণ্ডার ভয় দেখানো ফোন- ‘এখানে কিন্তু খুব ঠাণ্ডা আর হাওয়া, যথেষ্ট গরম জামা কাপড় সঙ্গে আনিস কিন্তু।’
আমাদের বেরনোর দিন ঠিক নবমীর ভোরে, অক্টোবর মাস দুর্গা পুজোর সময়, দেশ থেকে বহুদূরে ভেজা মন, নীল আকাশে পেঁজা তুলোর সজ্জা। অবচেতন মনে সেই ছেলেবেলার নবমীর সকালের শিউলির গন্ধ, ঘুমের ঘোরে মায়ের ডাক যেন আজও কানে বাজে, ভেতরের শিশুটি যেন জেগে যায়। বাঙালি যত দূরেই থাকুক দুর্গা পুজোর সময় যেন নাড়ীর টান অনুভব করে, বন্ধু বান্ধব প্রিয় জনদের কাছে পেতে চায়। তাই এই বেড়াতে যাওয়া যেন মনে করিয়ে দিল সেই ছেলেবেলার শিরশিরে শীত শীত ভোরে ঘুম ভাঙ্গা চোখে বেড়াতে যাওয়ার কথা।
তুলুস থেকে ঠিক সময়েই প্লেন ছাড়ল, পৌঁছে গেলাম কোপেনহেগেন। কোথাও বেড়াতে যেতে হলে আমাদের কাছে দ্রষ্টব্য স্থানের এক লম্বা লিস্ট থাকে, সেই লিস্ট তৈরি হয় ইন্টারনেট ঘেঁটে, নানান রকম গবেষণা করে।