হ্যালুইন থেকে শুরু করে বড়দিন, নতুন বছর, ক্রিসমাস, ইস্টার, গরমের ছুটি, ভ্যালেন্টাইনস ডে – এখানে চকোলেট খাওয়া চাই ই চাই – চকোলেট খাওয়ার জন্যে ফরাসীদের জন্যে বোধহয় বছরের কোন একটা বিশেষ দিনের শুধু মাত্র ছুতো চাই। বলতে গেলে, সারা বছরই ফরাসীরা চকোলেট প্রেমে মাতোয়ারা। চকোলেট শুধু নিজে খেয়েই খুশী নয় – চকোলেট আদান প্রদানও এখানে এক বিশেষ কেতা। কেউ নিমন্ত্রণ করলে এক বাক্স চকোলেট নিয়ে গেলে নিমন্ত্রণ কর্তা কি পরিমাণ যে খুশী হয়!
এখানে এসেই হাজার ধরণের চকোলেটের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। বিশ্বের নামী ব্র্যান্ডের চকোলেট তো বটেই এমনকি এখানের স্থানীয় মানুষের হাতে তৈরি বিশেষ চকোলেট থেকে শুরু করে ক্রিসমাসের সান্তা ক্লজ, খরগোস চকোলেট, ডার্ক চকোলেট সবই সময় নিয়ে বছরের নানা সময়ে একে একে চেখে দেখতে হয়েছে – এতোই লোভনীয় চকোলেটের চেহারা গুলো যে না চেখে উপায় নেই।
ফরাসী উৎসবের মরশুম এলেই বাজার ছেয়ে যায় নানা ধরণের, নানা আকারের মানানসই চকোলেটে। বছরের নানান মরশুমের সঙ্গে মানিয়েই যেন বাজারে চকোলেটের আবির্ভাব হয়। যেমন, ইস্টারের সময় ডিম আকৃতির চকোলেট বাজার মাত করে দেয়, আবার ক্রিসমাসের ঠাণ্ডা মরশুমে উষ্ণতা এনে দেয় Mon Chéri ও ছোট্ট ছোট্ট বোতল আকৃতির চকোলেট গুলো – চকোলেটের তৈরি ছোট্ট বোতল গুলো ও চকোলেটের ভেতরে ফ্রান্সের নানা জায়গায় তৈরি ওয়াইন বা Liquor ভর্তি থাকে, মুখে দিয়ে এক কামড়েই জিভে ও গলায় ওয়াইনের উষ্ণতা অনুভব হয় – গলন্ত চকোলেট ও ওয়াইন বা Liquor এর সামান্য তেতো স্বাদ চকোলেটের আসল স্বাদে এক অন্য মাত্রা ও উষ্ণতা দুইই এনে দেয়। আবার শীতের সময় গলন্ত চকোলেটে ফলের টুকরো ডুবিয়ে খাওয়াও এখানের এক চকোলেট সংস্কৃতি।
এখানে এসে জেনেছি চকোলেট শুধু ছোটদের খাদ্য নয় – বয়স্কদেরও চকোলেটে সমান অধিকার, এমনকি কালো বা ডার্ক চকোলেটের নানান উপকারিক দিক আছে – প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর ডার্ক চকোলেট নাকি উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে, রক্তের কোলেস্টরল কমায়, এমনকি অনেকাংশে হার্টের রোগ সারাতেও সাহায্য করে। ফরাসীরা বলে চকোলেট নাকি মস্তিষ্কের চিন্তা শক্তি যোগায়, ডিপ্রেশন সারায়, চামড়াকে সূর্যরশ্মির ক্ষতি হতে বাঁচায় – আরও কতো কি। অবশ্যঐ সব উপকারি চকোলেট গুলোয় Cocoa র পরিমাণ বেশী ও মিষ্টির পরিমাণ একটু কম থাকে।
যাইহোক, চকোলেটের যখন এতোই গুণ তখন শণিবারের বাজার তালিকায় চকোলেট অতি অনায়াসে একটু জায়গা করে নেয়। আর, শীতের ছুটির দুপুরে পিঠে রোদ নিতে নিতে চকোলেটে কামড় বসিয়ে, চোখ বন্ধ করে ছেলেবেলার ফেলে আসা সেই নির্ভেজাল, সহজ, সরল, আনন্দ অনুভূতিকে খোঁজার চেষ্টা করি, যখন এক কামড় চকোলেটে পৃথিবীর সমস্ত আনন্দ, ভালো লাগা নিহিত ছিল। অবাক হয়ে দেখি এখনো চকোলেট খেতে মন্দ লাগে না!