আল্পসের পাহাড়শ্রেণী যেমন করে এই দেশের অপূর্ব সুন্দর দৃশ্যপট তৈরি করেছে তেমনি পাহাড় চূড়ার তুষার গলা জল থেকে তৈরি প্রচুর লেক সুইস সৌন্দর্যকে আরও সম্পূর্ণ করেছে, পরিপূর্ণ করেছে।
সুইজারল্যান্ডের ম্যাপে একবার চোখ রাখলেই বোঝা যায় এই দেশটি কতটা জল ধরে রেখেছে, সরকারী মতে প্রায় সাত হাজার ছোট বড় লেক মিলে সুইজারল্যান্ডের বিশাল জলাধার তৈরি হয়েছে – আর তাই সুইস সৌন্দর্যকে উপভোগ করার আরেক পথ জলপথে ভ্রমণ।
সমুদ্র যদিও অনেক দূরে, কিন্তু, এই নীল লেকের দেশের মানুষ বোধহয় কখনোই সমুদ্রের অভাব বোধ করে না। বিশাল লেক জেনেভা, বা লেক লুজার্ন বা যে কোন সুইস লেকে দৈনিক চলাচলরত যে কোন বোটে চড়ে বসে সুইস লেক গুলো ও তার পাশের ছোট্ট ছোট্ট সুইস গ্রাম শহর দেখা যে সুইস ভ্রমণেরই এক বড় অঙ্গ।
তাই, এই লেক গুলোকে ঘিরে বছরের নানা সময়ে প্রচুর টুরিস্টের আনাগোনা চলে। নীল লেক, সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় সাদা তুষার, পাহাড়ের গায়ে গায়ে সুইস জীবন যাপনের ছাপ সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমাদের কাছে সুইজারল্যান্ডের এক অপূর্ব সজল রূপ ধরা দিয়েছিল।
ফেব্রুয়ারিতে সুইস আবহাওয়া খুবই খামখেয়ালী হয়ে ওঠে, সকাল যদি শুরু হয় উজ্জ্বল হয়ে, কখন যে দুপুরের মুখ গোমড়া হয়ে যায়, ঢাকা পড়ে যায় ঘন মেঘের চাদরে – বোঝা মুশকিল।
ফেব্রুয়ারির এক উজ্জ্বল সুইস দিনের শুরুতে বোটে চড়ে বসেছিলাম, নানান ছোট ছোট ঘাটে থামতে থামতে, স্থানীয় মানুষ ও টুরিস্ট ওঠা নামা করতে করতে কখন যে আকাশ জুড়ে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়েছিল বুঝতেই পারিনি। কথা ছিল বোটে বসেই সমস্ত সুইস লেক ও তার আশেপাশের পাহাড়ী সুইস গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করবো।
সুইস লেকে ভেজা দিনে সেই জল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যেন এক অন্য পৃথিবীর অপূর্ব সৌন্দর্যকে অতিক্রম করার এক অনন্য অভিজ্ঞতা – কখনো দেখি একলা গাছ লেকের মাঝে নিঝুম দাঁড়িয়ে, কখনো দেখি লেকের নীল জলে তুষার সাদা পাহাড় ঝুঁকে পড়ে অপূর্ব ছবি তৈরি করেছে, কখনো দেখি নীল লেকের জলে অঝোর বৃষ্টির জল অতি অনায়াসে মিলে মিশে যাচ্ছে, আবার কখনো একরাশ মেঘ লেকের বুক ছুঁয়ে আবার ভেসে উঠছে।
সুইজারল্যান্ডের অপূর্ব প্রকৃতির বুকে ঘটে যাওয়া নিরন্তর পালাবদলের রহস্যময় ঝলক যেন সুইস লেকের বুকেই নিহিত – আর সেই রহস্য যেন এই জল ভ্রমনে না এলে আমাদের কাছে অনাবিষ্কৃতই থেকে যেত। তাই, সুইস লেকের এই জল ভ্রমন আমাদের সুইস ভ্রমণকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছিল, যে ভ্রমণের গল্পে একরাশ ঠাণ্ডা ভেজা বাতাস যেন আজও ছুঁয়ে যায়।