কখনো সুউচ্চ আল্পসের তুষার ধবল পাহাড়ি প্রান্তর, ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম, ছোট্ট একলা ষ্টেশন, কখনো বরফের দীর্ঘ অন্ধকার শীতল টানেল, কখনো পাহাড়ের উপরের বিপজ্জনক ঝুলন্ত সেতু, কখনো সবুজ উঁচু নিচু প্রান্তর, কখনো ছবির মতো ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম, হলুদ ঘাস ফুলে ঢাকা বিশাল মাঠ, কখনো নীল লেকের পাশ দিয়ে নিয়ম করে সারা বছরই ছুটে চলেছে দ্রুতগামি অক্লান্ত সুইস ট্রেন।
ষ্টেশনে ট্রেন আসা যাওয়ার সময় দেখে নিজের ঘড়ি মিলিয়ে নেওয়া যায় – এমনি নির্ভুল সময় জ্ঞান সুইস ট্রেনের। সুইজারল্যান্ডে এসে শুধু যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই মুগ্ধ করে তা নয় – মুগ্ধ করে সুইস ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা, ও সেই ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতাকে প্রকৃতির সঙ্গে জুড়ে দিয়ে প্রকৃতিকে আরও আরও সুগম্য করে তোলার সুইস প্রচেষ্টা।
আল্পসের খাঁজে খাঁজে সুইস দেশের প্রত্যেকটা গ্রাম, শহরকে জুড়ে দিয়েছে সুইস রেলপথ – পৃথিবীর সবচেয়ে খাড়া পাহাড় ‘Mount Pilatus’ এর চূড়ায় চড়ার ক্ষমতা রাখে সুইজারল্যান্ডের বিশেষ রেলপথ – দুই রেললাইনের মাঝে আরেক খাঁজকাটা রেলপথ ও ট্রেনের এক খাঁজকাটা বিশেষ ধরণের সমান্তরাল চাকা সুইস রেলকে আল্পসের পাহাড়ে পাহাড়ে চড়তে সাহায্য করে। তাই, সুইজারল্যান্ডের এই রেলপথের যাত্রা জীবনের এক বিশেষ অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
উনিশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সুইসরা যখন রেলপথ দিয়ে আল্পসের নানা পাহাড়কে জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল – বিশ্বের অনেকের কাছেই মনে হয়েছিল ‘অসম্ভব’ ‘পাগলের কল্পনা’ কিন্তু, সময় ও অদ্ভুত সুইস ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা প্রমান করেছে পৃথিবীতে মানুষের কাছে কিছুই অসম্ভব নয়। আর আজ সুইস যোগাযোগ ব্যবস্থা পৃথিবীর টুরিস্টদের কাছে এক আশ্চর্য উপহার।
সুইজারল্যান্ডে পা রেখেই ট্রেনের পাস নিয়ে নিলেই টুরিস্টদের জন্যে সুইস যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্ত দরজা খুলে যায় – ট্রেন থেকে শুরু করে, ষ্টীমার, বোট, ট্রাম, বাস সবই এক সূত্রে বাঁধা। তাই, সুইস রেলের পাস নিয়েই দেশটার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত – পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, পাহাড় থেকে সমতল, পাহাড়ে তুষারপাত থেকে লেকের বুকে বৃষ্টি ঝরা – সবই শুধু ট্রেনে বসে বসেই দেখে নেওয়া যায় – যেদিকেই যাওয়া হোক না কেন ট্রেনের জানালায় তো সুইস গ্রাম শহরের অপূর্ব দৃশ্যই সরে সরে যায়।
ট্রেনের জানালায় কখনো দেখি সবুজ পাহাড়ের কোলে এক নিঝুম সুইস গ্রাম, গ্রামবাসীদের জীবন যাপনের ঝলক, আবার কখনো দেখি তুষার ধবল খাড়া পাহাড়ের খাঁজে থমকে থাকা টুকরো মেঘ বৃষ্টি ঝরানোর অপেক্ষায়। দেখি আর দেখি – পৃথিবীর বুকের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে বাগ্রুদ্ধ হয়ে যায়। আজও যখন সুইস ভ্রমণের কথা মনে হয় – চলমান সুইস সৌন্দর্যের ঝলক ভেসে ওঠে। এক গতিময় সুইস ভ্রমণ মনে গেঁথে রয় – ভালো লাগে।