ভিনসেন্টকে ভালোবেসে (Loving Vincent, an upcoming film)

abakprithibi photo

পারহ্যাপস ইউ লাভ ভিনসেন্ট ভ্যান গো – দরজা খুলতেই ফরাসী ছেলেটি হাসিমুখে কথাটি বলেই তাঁর নিজের আঁকা প্রচুর ছবি দেখাতে শুরু করেছিল। অবাক হয়ে দেখেছিলাম, কি আশ্চর্য সুন্দর করে নিখুঁত ভাবে সে ভ্যান গঘ এর আঁকা নকল করেছিল। আর সেই নকল করেও কিন্তু তাঁর চোখে কোথাও নকল করার গ্লানি ছিল না, বরং অদ্ভুত এক গর্ব ছিল।

তাঁর বিশাল ফাইল খুলে ছবি গুলো একে একে দেখাতে দেখাতে সে বলেছিল – আসলে আমি ও কয়েকজন বন্ধু মিলে এই ছবি গুলো বিক্রি করে, যা পয়সা আসে তা দিয়ে ক্রিসমাসের সময়ে ফ্রান্সের দরিদ্র মানুষকে খাবার কিনে দি।

রবিবারের ছুটির দুপুরে আমাদের কাছে সময় ছিল, ওর কাছেও সময় ছিল – তাই সময় নিয়ে অনেকক্ষণ ধরেই সে ছবি দেখিয়েছিল। সম্প্রতি এক সিনেমার কথা শুনে সেই উজ্জ্বল সোনালি ছুটির দুপুরের ছবি এক ছুটে, সামনে এসে দাঁড়ালো।

এই সেই দক্ষিণ ফ্রান্স যেখানে ভিনসেন্ট ভ্যন গঘ জীবনের অনেক সময় কাটিয়েছিলেন, দক্ষিণ ফ্রান্সের অপূর্ব প্রকৃতি ছিল ডাচ post-Impressionist শিল্পী, ভ্যন গঘের তুলির প্রেরণা।

ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ প্রথম দিকে কখনোই খুব দৃঢ় ভাবে তাঁর আঁকা ছবির নীচে সাক্ষর করতেন না। তিনি সেই ছবি গুলোতেই সাক্ষর করতেন – যে ছবি নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হতেন, যে ছবি তাঁর মনে হোতো, বিক্রির জন্যে সম্পূর্ণ – সেই ছবিতেই সাক্ষর করতেন – ‘ভিনসেন্ট’ – শুধুই নাম, ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ বা ভ্যান গঘ নয়।

সে নিয়ে তিনি তাঁর ভাইকে চিঠি লিখেছিলেন – হয়তো ভবিষ্যতে ফ্রান্সের শিল্পীর নামের তালিকায় আমার নাম ভিনসেন্ট বলেই লেখা হবে, ঠিক যে ভাবে আমি ক্যানভাসে সাইন করেছি – শুধুই ভিনসেন্ট, ভ্যান গঘ নয়। কারণ এখানে কেউই আমার পদবী সঠিক উচ্চারণ করতে পারে না।

‘এখানে ’ বলতে দক্ষিণ ফ্রান্সের ছোট্ট শহর Arles  কে বুঝিয়েছিলেন – Arles  এ ভিনসেন্ট তাঁর জীবনের বহু সময় কাটিয়েছিলেন। আসলে van Gogh  তো ডাচ পদবী, ইংরেজ বা ফরাসী নয়, তাই উচ্চারণও অদ্ভুত, আর সেই জন্যেই বোধহয় ফরাসীরা Vincent  van Gogh  কে ভিনসেন্ট বলতেই বেশী পছন্দ করে, স্বছন্দ বোধ করে।

ভিনসেন্টের শিল্পী জীবনের ক্যানভাস যতই রঙিন ছিল, আলোকিত ছিল, ততোই অদ্ভুত, বিষণ্ণ একাকী, উদাসী, হতাশ, ধূসর ছিল ভিনসেন্টের পার্থিব জীবন। মাত্র সাইত্রিশ বছরের জীবন কালে, মাত্র আট বছরের শিল্পী জীবনে হাজারের কাছাকাছি পেইন্টিং, ড্রয়িং, ও চিঠি রা যখন তাঁর গল্প বলে, তাঁর কথা বলে – আজও মানুষ অবাক হয়ে তাঁর গল্প শোনে, তাঁর আঁকা ছবি দেখে – শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হয়। তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন – আমি ছবির মধ্য দিয়েই নিজের কথা বলতে পারি।

ক্যানভাসের গায়ে তাঁর তুলির অদ্ভুত, আশ্চর্য টান, যা আগে কেউ দেখেনি – সেই সময়ে তাঁর তুলি এক নতুন শিল্প যুগের সূচনা করেছিল – অথচ, তাঁর জীবনকালে তিনি একটি  মাত্র ছবি ‘The Red Vineyard’ ই – বিক্রি করতে পেরেছিলেন। আর আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামী পেইন্টিংএর তালিকার তাঁর আঁকা ছবি স্থান করে নিয়েছে।

তাঁর পার্থিব জীবনের রহস্যময় মৃত্যুর পরেই জন্ম হয়েছিল ভিনসেন্ট ভ্যন গো এর আসল শিল্পী জীবন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে তাঁর এক একটা পেইন্টিংকে তাঁর মাস্টার পিস হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল।

 “Loving Vincent” এর  trailer  দেখে মনে হয় – ভিনসেন্ট কে সত্যি আজকের শিল্প ও শিল্পী প্রেমী মানুষ কতটা ভালোবেসেছে, শুধু শিল্পী কিংবা তাঁর শিল্পের জন্যেই নয়, মানুষ হিসাবে তিনি কেমন ছিল তা জানার জন্যে মানুষের উৎসাহ কতটা,  তারই নমুনা যেন সম্পূর্ণ হাতে আঁকা ওয়েল পেইন্টিং এর ফ্রেম দিয়ে তৈরি এই এনিমেশন সিনেমা।

এই ছবির জন্যে animator দের এক একটা ধাপের জন্যে একটা ওয়েল পেইন্টিং আঁকতে হয়েছে। সম্পূর্ণ হাতে আঁকা ওয়েল পেইন্টিং দিয়ে, প্রায় সাতান্ন হাজার ফ্রেম নিয়ে তৈরি হবে আশি মিনিটের সিনেমা – আর এই আশি মিনিটের সিনেমার জন্যে প্রায় একশো জনের কাছাকাছি উন্নতমানের শিল্পীরা দুই বছর ধরে পরিশ্রম করে চলেছে, ওরা শিল্পীর জীবনের গল্প তাঁর শিল্প দিয়েই বলতে চেষ্টা করছে। এই সিনেমায় ভিনসেন্টের আঁকা ছবি ও চিঠিতে তাঁর জীবনের যে গল্প ছিল, তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে যে রহস্য ছিল – তা এক চলমান রূপ পাবে, কথা পাবে। ঠিক যেমন করে ভিনসেন্ট ছবির মাধ্যমে তাঁর কথা বলতে চেয়েছিলেন।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Inspirational and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s