ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত, সারা ইউরোপ যখন শীতে জড়, ধূসর, রং হীন, ঠিক সেই সময়েই প্রকৃতি ফ্রেঞ্চ রিভেইরার Alpes Maritime এর পাহাড়ে পাহাড়ে, মিমোসার অপূর্ব সোনালি রং ঢেলে দিয়ে ফরাসী প্রকৃতিকে সাজিয়ে দেয়।
ছোট্ট ছোট্ট বোতামের মতো সোনালি হলুদ মিমোসা ফুলের প্রেমে ফরাসী ও ফ্রেঞ্চ রিভেরার মানুষ এতোই আত্মহারা, যে, ছোট্ট এই ফুলের ফুটে ওঠা নিয়ে, ফেব্রুয়ারির মাঝামঝি সময়ে বিশাল এক ফুল উৎসবেরই আয়োজন করে ফেলেছে। এই উৎসবে ফরাসী সুন্দরীদের মধ্য থেকে মিমোসার রানী নির্বাচন হয়, ফ্রেঞ্চ রিভেইরায় মিমোসা রানীর আবার খুবই সম্মান, সমাদর।
অথচ, যে ফুলকে ঘিরে এতো উৎসব অনুষ্ঠান, সেই ফুল কিন্তু, আদতে ফ্রান্সের আদি বাসিন্দাই নয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে ব্রিটিশদের হাত ধরে এই ফুল প্রথম ফ্রান্সের রিভেইরা অঞ্চলে ঢুকেছিল – ফ্রেঞ্চ রিভেইরার জল হাওয়া এই ফুলের এতোই পছন্দ হয়ে গেল, যে, মনের আনন্দে ফুটে উঠল। ফরাসী প্রকৃটির ক্যানভাসে রং সাজালো মিমোসারা। হোক না বিদেশী, ধূসর শীতের প্রেক্ষাপটে, সোনালি রঙের যাদু দিয়ে মিমোসারা যে শুরুতেই ফরাসীদের মন জয় করে নিল।
তারপর তো মিমোসা এই অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে, জীবন যাপনে, অর্থনীতিতে, সুবাসে – সব বিষয়েই রাজত্ব করতে শুরু করে দিল। মিমোসার হালকা সুবাসে তৈরি হল মনভোলানো সুগন্ধী, পারফিউম। তাই, পারফিউম নগরী গ্রাসে মিমোসার খুবই আদর।
আর, এই সময়ে নিস ছেড়ে একটু বাইরে, গ্রামের দিকে, Tanneron অঞ্চলের দিকে গেলেই, দূর পাহাড়ে দেখা যায় লক্ষ লক্ষ হলুদ মিমোসার ফুটে ওঠা, মিমোসা ফুলের গাছ গুলো বেশ বড়ই হয়। তাই, ঘন নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে, উজ্জ্বল সোনালি হলুদ থোকা থোকা মিমোসারা অপূর্ব ছবি তৈরি করে।
আর, সেই অপূর্ব হলুদ প্রকৃতির সাক্ষী হতে অনেকেই এই সময়ে সেই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে আসে। পাহাড়ের গায়ে ফুটে ওঠা মিমোসার পথ ‘La Route du Mimosa’ ধরে ট্র্যাকিং এ যায়, মিমোসার পথে নিজেদের হলুদ স্বপ্নকে খোঁজে। নিস থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে, ফ্রেঞ্চ রিভেইরার এই Tanneron অঞ্চলে সবচেয়ে বেশী মিমোসার চাষ হয়, তাই এই ছোট্ট গ্রামকে মিমোসার রাজধানীও বলা হয়।
নিসে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ফুলের উৎসবকে ঘিরে যেন এক স্বপ্ন জগৎ সাজানো হয়, পৃথিবীর নানা দিক থেকে এই উৎসব উপলক্ষে নানা ধরণের মানুষ এখানে আসে।
লক্ষ, হাজার ধরণের ফুলের মেলা, যেখানে বাতাসে শুধুই সঙ্গীত ও নানান ফুলের সৌরভ ভাসে, ভাসে মিমোসার সুবাস, যেখানে নীল আকাশে ছুঁড়ে দেওয়া হয় হলুদ মিমোসা ফুলের তোড়া, উপস্থিত মানুষের মুখে সাজানো থাকে একমুঠো হাসি, আকাশে ছুঁড়ে দেওয়া মিমোসার তোড়া লুফে নেওয়ার স্বর্গজয়ী আনন্দ, মুখ ছুঁয়ে যাওয়া মেডিটেরিয়ান সমুদ্রের ঠাণ্ডা নোনা হাওয়া – দিনটি স্বপ্ন নয় তো কি?
চমৎকার! অনেক ভালো লাগলো পোস্টটি।
শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ। আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থাকবেন।