হেলসিঙ্কি শহরের একদম কেন্দ্রে, ব্যস্ত বাজার অঞ্চলে, হেলসিঙ্কি শহরের পুনর্জন্মের প্রতীক এক জলপরীর ব্রোঞ্জ স্ট্যাচু ‘Havis Amanda’ – এই শহরের অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ। অথচ, ১৯০৬ এ যখন প্যারিস থেকে এই মূর্তি তৈরি হয়ে এলো, এই নারীমূর্তিটিকে হেলসিঙ্কি বাজারের মাঝে স্থাপিত করা নিয়ে বহু জল ঘোলা হয়েছিল, প্রায় দুই বছর ধরে নানা টানাপড়েনের পরে এই জায়গায় মূর্তিটি স্থাপিত হয়েছিল।
এখন এই মূর্তি হেলসিঙ্কির সবচেয়ে নামী, দামী, ও প্রিয় এক মাস্টারপিস। স্থানীয় মানুষেরা এই মূর্তিটিকে খুবই ভালোবাসে, একে ঘিরে বছরে একবার হেলসিঙ্কির বিশেষ এক উৎসব হয় – Vappu, ইউনিভার্সিটির সমস্ত ছাত্র ছাত্রীরা মিলে নানান উৎসব অনুষ্ঠান সহযোগে এই জলপরীর মাথায় টুপি পড়ায় ও সেই টুপি পড়ানো উৎসব দেখতে প্রচুর টুরিস্ট ইউরোপের নানা দিক থেকে এখানে এসে জমায়েত হয়।
সমুদ্র থেকে উঠে আসা এই নারীমূর্তিটি সমুদ্র আগাছার উপরে দাঁড়ানো, আর চারদিক থেকে চারটে মাছ মূর্তিটির গায়ে জল ছিটিয়ে দিচ্ছে, আর চারদিক থেকে সি লায়ন তাঁকে ঘিরে রেখেছে। হেলসিঙ্কি শহরের একদম মাঝে দৃষ্টি নন্দন এই ফোয়ারা তাই কারোরই চোখ এড়ায় না।
উজ্জ্বল ছুটির দিনে হেলসিঙ্কি বাজারে ঘুরে ক্লান্ত পথচারীদের ক্ষণিক বিশ্রামের জায়গা এই ফোয়ারা, বা এই ফোয়ারাকে ঘিরে বসার জায়গায় বসে হেলসিঙ্কি শহরের জীবনযাত্রার ব্যস্ততা দেখাও যেন টুরিস্টদের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণ। শুধু কি, ক্লান্ত পথিকের জিরনোর জায়গা! পায়রা ও সিগালেরা তো হাভিস আমান্ডার মাথার উপরে বসেই চারিদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখে।
এই মূর্তিটিকে ঘিরেই যেন হেলসিঙ্কির জনজীবন বয়ে চলে, দূরে পাহাড়ের উপরের লাল ক্যাথিড্রালের চূড়া দেখা যায়, কাছেই খোলা জায়গায়, সমুদ্রের তীরে প্রতিদিনের বাজার বসে, উল্টো দিকে দীর্ঘ সবুজ পার্ক, একটু হেঁটে গেলেই হেলসিঙ্কি বন্দরে জাহাজের ব্যস্ত আনাগোনার দৃশ্য, জাহাজের ভোঁ – সব মিলিয়ে এর নীচে বসে হেলসিঙ্কি শহরের চলমান জীবন যাপনের ঝলক দেখতে দেখতে অনায়াসে দুপুর থেকে বিকেল কেটে যায়।
আমরা তো এই অচিন দেশে ক্ষণিকের অতিথি, ভ্রমণ পিয়াসী, আমাদের কাছে তো অচেনা দেশের নানান টুকরো ছবির মূল্য অনেক, জীবনের এক অমূল্য সঞ্চয়, তাই দু’ চোখ ভরে যা দেখি তাই দিয়েই পূর্ণ করি আমাদের ভ্রমণ স্মৃতির ঝুলি। দিন শেষের হলুদ আলোর এক অদ্ভুত রশ্মি এসে পড়ে হাভিস আমান্ডার মুখে, আলোকিত করে দেয় জায়গাটা, ভালো লাগে।
জলপরী –
কি রূপ তোমার
আহা মরি মরি !!
অনেক ভালো লাগলো জলপরীর ছবি। লেখাটিও দারুণ।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
ছন্দময় কমেন্টের জন্যে ধন্যবাদ। আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থাকবেন।