ইউরোপের পুরনো শহর গুলোর পথের পাশে, আজকের এই ডিজিটাল যুগেও ক্যানভাসে রং তুলির যাদু দেখা যায়, দেখা যায় নানা রঙের ক্যানভাসে শিল্পীর কল্পনার রং – এখানে আজও মানুষ শিল্পীর হাতে আঁকা ছবির কদর করে। ইউরোপের ঐতিহাসিক শহর গুলোর গলির মোড়ে মোড়ে নানা রঙের ক্যনভাস যেন ঐ সমস্ত শহরে আরও সৌন্দর্য যোগ করে দেয়, পুরনো শহরে পুরনো দিনের ছোঁয়া দেয়।
প্যারিস, স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল, জার্মানি, অষ্ট্রিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপের উত্তরের দেশ প্রাগ, লাটভিয়া, ইস্তনিয়া বা ফিনল্যান্ডের যে শহরেই গিয়েছি, ঐতিহাসিক শহর গুলোর গলির পাশে পাশে পথ শিল্পীদের আঁকা ক্যানভাস দিয়ে তৈরি খোলা গ্যালারী দেখেছি, দেখেছি ছবি দেখার ও কেনার খোলা নিমন্ত্রণ।
এখানে শিল্পীরা কখনোই তার আঁকা ছবি কেনার জন্যে গায়ে পড়ে অনুরোধ করে না – যে কেউই দেখে যেতে পারে, চাইলে কিনতে পারে। বলা যায় না, হয়তো কেউ কোন ছবি কিনলে কোন ভবিষ্যতের বিখ্যাত শিল্পীর আঁকা মাস্টার পিসের অধিকারী হয়ে যেতে পারে।
ইউরোপের কোন কোন শহরে রাস্তার পাশে তেল রঙে আঁকা বেশ দামী ছবি যেমন দেখা যায়, তেমনি আবার টুরিস্টদের নাগালের মধ্যে, জল রঙে আঁকা ছোট ছোট ছবিও দেখা যায়, ছবি গুলো সাধারণত ঐ শহরের নানান ল্যান্ডমার্কের উজ্জ্বল ছবি।
প্যারিসের পথে পথে তো ল্যুভরে মিউজিয়াম থেকে শুরু করে, আইফেল টাওয়ার বা নত্রে দাম ক্যাথিড্রালের তেলরং ও জলরঙের ছবির প্রদর্শনী খুবই দেখা যায় – তবে ঐ সব ছবি টুরিস্টদের না কেনাই ভালো, কারণ প্যারিসে ঐ সমস্ত পথ গ্যালারীর প্রদর্শিত, অনামী শিল্পীর আঁকা ছবির সঠিক দাম টুরিস্টরা কেউই জানে না, আর্টিস্ট যে কোন দাম হাঁকতে পারে।
মানুষের প্রাচীন বিনোদন ও শিল্প ছিল ছবি আঁকা, মানুষের চোখ যা দেখে তা যেন খুবই সীমিত এক দেখা – সেই দেখার মধ্যে যেন এক সীমানা বাঁধা থাকে, কিন্তু, শিল্পীর আঁকা এক ছবি যেন মানুষের দেখার সেই ক্ষুদ্র সীমানা ছাড়িয়ে যায়, মানুষের বোঝার, অনুভূতির সীমানাকে প্রসারিত করে। তাই, ইউরোপে পথের পাশে যখন কোন বিমূর্ত ছবির গ্যালারী দেখি – বুঝি শিল্পী আমাদের দেখার ক্ষুদ্র সীমানা ছাড়িয়েছে। আর, ইউরোপে আজও কিছু মানুষ সেই প্রাচীন শিল্পকে আঁকড়ে বাঁচে, হোক না পথের পাশে খোলা গ্যালারী, মানুষ যে শিল্পীর আঁকা ছবি দেখছে তাতেই বোধহয় শিল্পীর আনন্দ, শিল্পী যে তার শিল্পের মধ্যেই বাঁচে।