দুরো নদীর মোহনায় (Foz do Douro, Porto, Portugal )

এখানে এসে একদিকে সাগরের বুকে শান্ত দুরো নদীর আত্ম সমর্পণ, আরেকদিকে অ্যাটল্যান্টিক সাগরের বিশালতা দেখা যায়। যেখানে দুরো নদী এসে অ্যাটল্যান্টিকে মিশেছে, সেখানে নদী ও সাগরের জলের রং-এর পার্থক্য দিব্যি বোঝা যায়, তাছাড়া, সেখানে জলের মধ্যেই এক স্তম্ভের উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয় – দুরো নদীর পরিচয় এখানেই শেষ হয়েছে, কিংবা, এখানেই নদী ও সাগরের পরিচয় মিলেমিশে একাকার। বিস্তীর্ণ, উদার সেই দুরো মোহনায় প্রচুর ছোট ছোট মাছ ধরার নৌকো ভাসে, সেখানে নাকি খুব ভালো মাছ পাওয়া যায়।

পোর্ত শহরের পশ্চিমে, দুরো ও আটলান্টিকের নাটকীয় মিলনকে আরও বেশী সুন্দর করেছে সাগর ও নদীর পাশে পাশে দীর্ঘ, সুন্দর বাঁধানো এক রাস্তা। পর্তো শহরের সম্পূর্ণ আধুনিকতা, উন্নত জীবন যাপন ছোঁয়া নিয়ে তৈরি এই অঞ্চলকে Foz do Douro বলা হয়। আর, পোর্ত শহরের জীবনযাপনের ছবি সম্পূর্ণ ভাবে দেখতে হলে এই Foz do Douro তে তো একবার আসতেই হয়।

তাছাড়া, শতাব্দী ধরে পর্তুগাল ও ইউরোপের বহু শিল্পীর তুলিতে ও কলমে এই Foz do Douro অঞ্চলের উদার, অপূর্ব সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে। সমুদ্র ও নদীর পাশে এই দীর্ঘ রাস্তা তৈরির গল্পটা কিন্তু শুরু হয়েছিল ১৯৩০ এ, পোর্তো শহরের মেয়রের স্ত্রী, ফ্রান্সের নিস শহরের ‘Promenade des Anglais’ দেখে মুগ্ধ হয়ে ভেবেছিলেন, Foz do Douro তেও হাঁটার জন্যে এমনি সুন্দর এক রাস্তা তৈরি করতে হবে। আর প্রায় আশি বছর পরে, আমরা আজ, তার সেই ভাবনায় তৈরি পথ ধরে হেঁটে চলেছি।

এখানে দীর্ঘ বাঁধানো পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে যেমন দেখা যায় পাথরের বুকে আটলান্টিকের উত্তাল, চঞ্চল ঢেউ ভাঙ্গা, তেমনি ধীর শান্ত দুরো নদীর প্রশান্তি – তাই দীর্ঘ এই পথ চলায় কোন ক্লান্তি নেই, যদিও বা ক্লান্তি আসে, অ্যাটল্যান্টিক ও দুরো নদী ছুঁয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস পথের সব ক্লান্তি যেন জুড়িয়ে দেয়।

এই পথ আমাদের নিয়ে চলে, নদী মোহনায় পুরনো বাতিঘরের কাছে, সেখানে দেখা হয়ে যায় বহু স্থানীয় মানুষের ছিপ ফেলে মাছ ধরার ধ্যানমগ্নতার সঙ্গে। পর্তুগালের প্রিয় অবসর যাপন হয়তো মাছ ধরা, পর্তুগালের যেখানেই গেছি দেখি কিছু স্থানীয় মানুষ মনোযোগ দিয়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত। তাছাড়া, এখানে সমুদ্রের কাছে হাওয়ায় উড়ন্ত নীল পতাকা সগর্বে ঘোষণা করে – এখানের সমুদ্র পৃষ্ট সম্পূর্ণ দূষণ মুক্ত, তাই হয়তো মাছও ভালো পাওয়া যায়।

এখানে বহু মানুষ, মোহনার কাছে, সমুদ্রের কাছে, একটুকরো রোম্যান্টিক সময়ের খোঁজে আসে, আটলান্টিকের দিকে মুখ করে বুক ভরে তাজা বাতাস নিতে নিতে, সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে দুরো নদীর মোহনার কাছে জীবনের সেই অপূর্ব মুহূর্তকে চিরস্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করে।

মানুষের জীবনে এমনি মোহনার দেখা তো বার বার মেলে না, একবারই মেলে – তাই ঐ দিনে, ঐ সময়ে দুরো নদীর মোহনার কাছে যা দেখেছি, যা পেয়েছি, যা অনুভব করেছি সবই তুলনাহীন এক ভ্রমণ স্মৃতি, যে স্মৃতি আমাদের সুখ অনুভূতিকে জাগ্রত করে, যে অনুভূতি পৃথিবীকে আরও নতুন ভাবে, ভালো ভাবে দেখার প্রেরণা দেয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Portugal, Southern-Europe, Travel and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s