টুকটুকে লাল, মিষ্টি রসালো, এক হালকা সুগন্ধ যুক্ত ফল – স্ট্রবেরি যখন তুলুসের বাজার লাল করে দেয় – বোঝা যায় সামার এসে গেছে। অবশ্য, শুধু তুলুস কেন, গোটা ইউরোপই তখন স্ট্রবেরির রক্তিম রঙে রাঙা হয়ে ওঠে, বাজার মাত করে দেয় স্ট্রবেরি। আবার, মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই খুব নরম এই ফলটি বাজার থেকে গায়েবও হয়ে যায়। তুলুসে খুব অল্প কয়েকদিনের জন্যেই এই ফলের মরশুম থাকে, অবশ্য যত উত্তর ইউরোপের দিকে যাওয়া যায় একটু বেশী সময় ধরে এই ফলের মরশুম দেখা যায়।
হেলসিঙ্কির বাজারে দেখেছিলাম স্ট্রবেরির মেলা, নানা ধরণের স্ট্রবেরির উপস্থিতি জায়গাটাকে এক মিষ্টি গন্ধে ভরিয়ে রেখেছিল। হেলসিঙ্কির বাজারে স্ট্রবেরি লিটার হিসাবে বিক্রি হয় – ব্যপারটা বেশ অদ্ভুত লেগেছিল। স্ট্রবেরি কিনতে চাইলে ওজন না করে, এক লিটারের মগ ভর্তি স্ট্রবেরি দেয়।
প্রাচীন কালে, স্ট্রবেরি নাকি জঙ্গলের ফল ছিল। হেলসিঙ্কির এক দ্বীপের জঙ্গলে দেখেছিলাম – প্রচুর জংলি স্ট্রবেরির গাছ, সবুজের মাঝে মাঝে ছোট ছোট পাকা জংলি স্ট্রবেরি জঙ্গলকে উজ্জ্বল লাল করে রেখেছিল। এক দু’টো তুলে চেখে দেখেছিলাম – বেশ টক মিষ্টি স্বাদ।
ইউরোপে, জংলি স্ট্রবেরিকে বর্তমানের বাজারের মিষ্টি স্ট্রবেরিতে পরিণত করার ও স্ট্রবেরি চাষের ইতিহাস কয়েকশো বছরের পুরনো। স্ট্রবেরি ফলটি যেমন নরম তেমনি এর গাছও খুব নরম – তাই খুব যত্ন নিয়ে এই ফলের চাষ করতে হয়। স্ট্রবেরি চাষের জমিকে সম্পূর্ণ ভাবে প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়, তারপর প্লাস্টিকের চাদর একটু কেটে তাতে লাগানো হয় স্ট্রবেরি গাছ – এই পদ্ধতিকে বলে plasticulture, স্ট্রবেরি ফলের গায়ে যাতে একটুও ধুলো মাটি না লাগে, তাই এই ব্যবস্থা।
এরা এই ফলকে কতরকম ভাবেই না খেতে পছন্দ করে তার ইয়ত্তা নেই। ইউরোপের মানুষের প্রিয় ফল এই স্ট্রবেরি – কিন্তু, কেন? একটাই উত্তর – প্রচুর ভিটামিন সি।
ভিটামিন সি এর পর্যাপ্ত উৎস এই লাল ফল – যা কিনা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়া, প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত এই ফল মধ্য বয়সে চোখের ছানি পড়ার হাত থেকে বাঁচায়, অবশ্য, শুধু স্ট্রবেরি নয়, বেশীরভাগ ফলেই প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি থাকে। আসলে, সূর্যের অতিরিক্ত আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের চোখকে বাঁচাতে ভিটামিন সি র খুব দরকার হয় – আর ফলই সেই ভিটামিন সি এর উৎস হতে পারে, তাই ভিটামিন সি যুক্ত ফল চোখে ছানি পড়া থেকে অনেকাংশে বাঁচাতে পারে।
স্ট্রবেরির নাকি ক্যানসার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দেখা গেছে – আসলে প্রচুর ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহু গুন বাড়িয়ে দেয়, দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করে।
প্রচুর ভিটামিন সি যুক্ত এই ফল চামড়ায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। রক্তে মিশ্রিত ব্যাড কলেস্টরল কমিয়ে দিয়ে হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়ামের এক বিশ্বস্ত উৎস – স্ট্রবেরি, যা কিনা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ছোট্ট এই লাল টুকটুকে ফলের আরও কত যে গুণ আছে, কে জানে?
তবে আমার মনে হয় হাতের কাছে পাওয়া, সমস্ত মরশুমি ফলেরই অসীম গুনাগুণ, ফল খেয়ে, হার্টের অসুখ বা উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে, এমন কথা শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।
আমাদের দেশে কয়েক বছর ধরে স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। কিন্তু আমি ও আমার আশেপাশে যাদের দেখেছি তাদের কারোরই স্ট্রবেরি নিয়ে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বাইরের স্ট্রবেরি হয়তো ভালো মানের। আমার ব্যক্তিগত ধারনা এর চেয়ে লিচু অনেক অনেক ভালো। তবে আমার স্ট্রবেরি ফ্লেভারের আইসক্রিম ভীষণ পছন্দের। জানি এই আইসক্রিমের গন্ধটা আর্টিফিশিয়াল।
স্বাদ যা ই হোক আপনাদের পোস্টটা অনেক ভালো লেগেছে।
শুভেচ্ছা আপনাদের।
কমেন্টের জন্যে ধন্যবাদ। হ্যাঁ, কোন কোন প্রজাতির স্ট্রবেরি বেশ টক হয়। তবে গন্ধটা বেশ চমৎকার, ফ্রেশ। তা যা বলেছেন – আমাদের আম, লিচু তো অনেক অনেক ভালো বটেই। ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা রইল।