কাল ছিল ডাল খালি, আজ ফুলে যায় ভরে – চেরি গাছে ঠিক এমনি ভাবেই ফুল ফোটে। ধূসর বরফ হিম শীতের শুরু শুরুতে রামনভিলের বাড়ী থেকে ক্যানাল দু মিদি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটা বাড়ীর সামনের বাগানে বড় শুকনো চেরি গাছ দেখেছিলাম কদিন আগেই।
শীতের শেষেই শুকনো ডালে হঠাৎ-ই ছোট ছোট সাদা থোকা থোকা ফুল ফুটে চারিদিক আলো করে দেয়। পথে যেতে গিয়ে মনে হয় কাল তো গাছে ফুল ছিল না? শুকনো ডালের এক টুকু অংশ বাকি থাকে না, সাদা ফুলে ঢেকে যায় – বাগান আলো করে দেয় শুধু এক চেরি গাছ। মনে হয়, শীত যেন ভুল করে চেরি গাছের শুকনো ডালে বরফ কুচি ছড়িয়ে গেছে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হালকা মৃদু এক সুবাস নাকে আসে, উচ্ছ্বসিত সন্ধানী মৌমাছিদের ব্যস্ত ওড়া উড়ি নজরে পড়ে।
চেরি ফলের নানান প্রজাতি নানা রঙের ফুল ফোটায়। সব প্রজাতির চেরি আবার খাওয়া যায় না, অথচ জংলি প্রজাতির চেরি গাছে অদ্ভুত সুন্দর বেগুনি, গোলাপি বা সাদা ফুল ফোটে – জায়গাটার চেহারাই বদলে দেয়। সেই সময় এক মায়াময় উজ্জ্বল সৌন্দর্যে ছেয়ে যায় চারিপাশ। তাই, যে সমস্ত প্রজাতির চেরি খাওয়া যায় না – রাস্তার দু’পাশে সেই সব গাছ লাগিয়ে দেয় এরা। খুবই নরম ও কোমল এই ফুলের গড়ন, ফোঁটার কিছুদিনের মধ্যে সহজেই ঝরে যায় এই ফুলের পাপড়ি। তাই, বসন্ত এলেই সাদা, গোলাপি চেরি ফুল বিছানো স্বপ্ন পথে হেঁটে যায় এখানের সাধারণ মানুষ।
চেরি ফুলের স্থায়িত্ব খুবই কম সময়ের জন্যে, কয়েক দিনের মধ্যেই সবুজ পাতা গজিয়ে যায় ও থোকায় থোকায় চেরি ফল ফলে যায়। চেরি গাছে ফল এলেই বাজার ছেয়ে যায় লাল টুকটুকে তাজা চেরি ফলে।
আমাদের বাড়ীর পাশে যে চেরি গাছে অসংখ্য ফুল এসেছিল, কয়েকদিনের মধ্যে দেখি সবুজ পাতার আড়ালে লাল চেরি মাথা উঁকি দিয়েছে। পাখিরাও ঠুকরে ঠুকরে চেরি খেতে শুরু করে দিয়েছে। ছুটির দিনের উজ্জ্বল সোনালি সকালে ক্যানেলের দিকে যাওয়ার পথে দেখি, চেরি পাড়ছে বাড়ীর মালিক। এতো চেরি পথচারীদের বিলিয়ে দিচ্ছে ওরা, আমাদের দিকেও হেসে চেরি ভরা ঝুড়ি এগিয়ে দিল – ‘যত পারো নিয়ে যাও’ বলে। আমরাও কিছু চেরি মুখে, কিছু জ্যাকেটের পকেটে পুরে ক্যানেল দু মিদির দিকে হাঁটতে শুরু করি।