তুলুসে বসন্ত ও সামার মানেই – এ শুধু ফুলের দিন, এ লগন ফুল ফোটাবার। বসন্ত আসি আসি করলেই শীতের ধূসর পটে যেন প্রকৃতি রঙের পোঁচ লাগাতে শুরু করে দেয়। চারিদিকে নানা রঙের এক হই হই রই রই ব্যাপার শুরু হয়।
সারা শীতে মাটির নীচে শীত ঘুমে থাকা টিউলিপ, ড্যাফোডিলরা মাটি ভেদ করে মাথা উঁচু করে আড়মোড়া ভেঙ্গে বসন্ত বাতাসে মাথা দোলাতে দোলাতে ফুল ফোটানোর তোড়জোড় শুরু করে দেয়। পার্কে, বাগানে মালিরা ব্যস্ত হয়ে ফুল গাছেদের তোয়াজ করতে শুরু করে দেয়। বড় বড় গাছেরা এতদিন যারা নিষ্পত্র হয়ে বৈরাগী ছিল, তারাও শুকনো ডালেই থোকা থোকা ফুল ফুটিয়ে সেজে গুজে রীতিমত সংসারী হয় সামারে।
এখানে সামার মানে ফুরফুরে বাতাস, হালকা শীত, ঘন নীল আকাশ, উজ্জ্বল দিন, হাজার রকমের রঙিন ফোঁটা ফুল, মৌমাছির গুঞ্জন, বাতাস নানা ফুলের হালকা সুবাসে সুরভিত – যেন প্রকৃতির এক উৎসব। এই উৎসবে ঘাস ফুলেরাও বাদ যায় না। নামী, দামী, অভিজাত ফুলেরা যখন মানুষের বেলকনি, বাগান, পার্ক সাজাতে ব্যস্ত, ছোট্ট ছোট্ট বোতামের মত হলুদ, সাদা ঘাস ফুলেরাও মাথা উঁচু করে বলে – আমরাও আছি, প্রকৃতিকে সাজাতে আমাদের অবদান যেন ভুলে যেও না।
সবুজ মাঠ ছেয়ে যায় হলুদ সাদা ঘাস ফুলে। কোথাও কোথাও আবার লাল পপি ফুলও বিস্তৃত সবুজ মাঠে লাল নক্সা বুনে দেয় – যেন এক বিস্তীর্ণ স্বপ্ন ভূমি, রঙিন দৃশ্য পট।
এখানে কত রকমের যে ফুল ফোঁটে তার ইয়ত্তা নেই। আমাদের জানা গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়াকে তো ছেড়েই দিলাম। আমার অজানা, অচেনা ফুলের রঙিন বাহারেই যে দিশাহারা। সেদিন আমাদের বাড়ীর সামনে এক শুকনো ফুল গাছে ঝেঁপে ছোট ছোট হালকা গোলাপি ফুল এলো, ঠিক কিছুদিনের মধ্যেই সবুজ পাতা গজিয়ে গিয়ে এক সবুজ-গোলাপি ছবি এঁকে দিল। এখানে যেহেতু সামার খুব কম সময়ের জন্যে থাকে, তাই প্রকৃতিরও যেন খুব তাড়া – তাড়াতাড়ি সেজে নেয় রঙিন ফুলের সাজে।
এখানে সামারে পথ চলতে চলতে কতবার যে ফুলের রঙিন আবেদন আমার পথ আটকে দাঁড়িয়েছে। ফুল ফোঁটার দিনে ফুল থেকে চোখ সরাই কি করে। তাইতো, চলার পথে আমি ‘রঙের খনি যেখানে দেখেছি রাঙিয়ে নিয়েছি মন’।