তুলুসে, বসন্তের শুরুতে প্রতিদিন যাওয়া আসার পথে কয়েকটা শুকনো গাছের ডালে ডালে দেখি ঝেঁপে ফুল এসেছে, ফুলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ গুলো। নীল আকাশের নীচে হালকা গোলাপি, সাদা এই ফুল গুলো এক অপূর্ব দৃশ্য পট তৈরি করে, এখানের বসন্তকে এক নতুন মাত্রা দেয় এই বড় পাপড়ির সুন্দর ফুল। কোন কোন দিন উজ্জ্বল দিনের শেষে এই গাছের নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় ঐ বড় বড় ফুল গুলোর হালকা এক মিষ্টি গন্ধে বিভোর হই – বুক ভরে শ্বাস নিই। অথচ, জানি না ঐ সুন্দর ফুল গুলোর নাম।
কয়েক বছর ধরে প্রতি বসন্তে এই অদ্ভুত সুন্দর ফুলের ফুটে ওঠা দেখতে দেখতে নাম জানতে উৎসাহী হলাম – নাম তার ম্যাগ্নোলিয়া। ফ্রেঞ্চ বোটানিস্ট Pierre Magnol এর নামে নামকরণ হয়েছে এই ফুলের। অন্তত কুড়ি প্রজাতির ম্যাগ্নোলিয়ার দেখা পাওয়া যায়।
বিশাল এই গাছ ইউরোপের নানান পার্কেও দেখেছি, পার্ক আলো করে রাখে, বসন্তে এই গাছ যে কোন পার্কের এক অলংকার। কোন কোন ম্যাগ্নোলিয়া গাছ শীতে সব পাতা ঝরিয়ে দেয় ও বসন্ত এলেই ফুল ফোটাতে শুরু করে। আবার কোন ম্যাগ্নোলিয়া চির হরিৎ, বসন্তে ফুল ফোটায়।
এই সময় অনেক ফোঁটা ফুলের মাঝে এই ফুল এক স্বতন্ত্র অস্ত্বিত বজায় রাখে। হালকা গোলাপি থেকে শুরু করে হলুদ, বেগুনি, সাদা রঙের ম্যাগ্নোলিয়াকে তুলুসের নানা জায়গায় দেখেছি, আর মুগ্ধ হয়েছি।
অনেক সময় আমাদের চারপাশের পরিবেশ নিয়ে বেশ উদাসীনই থাকি, প্রকৃতির রঙ বদল, দিন- রাতের সৌন্দর্য দু’ চোখ মেলে দেখতেও ভুলে যাই, ব্যস্ত থাকি দৈনন্দিন টানাপড়েন নিয়ে। কিন্তু, এখানে বসন্তে এই চমৎকার ফুল কিন্তু সমস্ত উদাসীনতা ভুলিয়ে দিয়ে নিজের দিকে ঠিকই আকর্ষণ করে নেয়। এই ফুলের মাতাল করা মোহময়ী সৌন্দর্যের দিকে তাকাতে বাধ্য হয় পথচারীরা, ভ্রমণার্থিরা। আমি ম্যাগ্নোলিয়ার সৌন্দর্যকে ধরে রাখি ক্যামেরায়।