নীলের কোলে শ্যামল সে দ্বীপ প্রবাল দিয়ে ঘেরা, শৈল চূড়ায় নীড় বেঁধেছে সাগর বিহঙ্গেরা – এই পংক্তিটি মানস চোখে যে অপূর্ব এক ছবি ফুটিয়ে তোলে, সেই কল্পনার ছবির সঙ্গে, যেন হুবহু মিলে যায় গথেনবার্গের স্টিরসো দ্বীপের স্বচ্ছ নীল ছবিটি।
স্টিরসো দ্বীপের মানুষের বসবাসে যদিও বর্তমান জীবন যাপনের ছাপ, তবুও এখানে এসে মনে হয় যেন রূপকথার দেশে এসে পৌঁছে গেছি – ছবির মত সাজানো ছোট ছোট বাড়ী, আঁকাবাঁকা সুন্দর রাস্তা, ঝকঝকে সোনালি দিনের সোনা রোদ – অপূর্ব, দেখে মনে হয় এখানে হয়তো এখনো রূপকথারা বেঁচে আছে।
দ্বীপ বাসীদের কাছে চাষ বাস, সমুদ্রে মাছ ধরা, পশু পালন, ছোট খাটো হোটেল, পর্যটন এই সবই জীবন ধারণের অঙ্গ। দ্বীপের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম বলতে – পায়ে হাঁটা কিংবা সাইকেল।
গথেনবার্গের Saltholmen থেকে ফেরী ধরে মাত্র কুড়ি থেকে আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় এই সবুজ রূপকথা দ্বীপে। হেঁটেই সম্পূর্ণ দ্বীপ দেখে নেওয়া যায় কিংবা চাইলে বন্দর থেকে সাইকেলও ভাড়া পাওয়া যায়।
হাঁটতে হাঁটতে দ্বীপের এক প্রান্তে গিয়ে দেখি আকাশের নীল ও সমুদ্রের নীল মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। নীল, নীল আর নীল – আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীলকে যেন ঠিক আলাদা করা যায় না। দ্বীপের শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে দূর দিগন্তে চোখ রাখলে দেখা যায় বেশ কয়েকটা ছোট ছোট পাথুরে দ্বীপ সমুদ্রের বুকে মাথা উঁচিয়ে আছে। এখানে সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা ছোট ছোট পাথুরে দ্বীপ গুলোর মধ্যে কেমন যেন এক রুক্ষ, নিঃস্ব, নেড়া ভাব।
আরেকদিকে দ্বীপের নিজস্ব ছোট বন্দরে সারি সারি সাজানো ছোট ছোট মাছ ধরার আধুনিক নৌকো। ছোট বন্দরের সাজানো সারি সারি লাল ঘর, আধুনিক নৌকোর সারি – সব নিয়ে এই দ্বীপটির এক বিশেষ নির্জন চরিত্র আছে – প্রতিটি কোণায় তাই এক একটি অনন্য ছবি তৈরি হয়। দ্বীপের অন্য এক দিকে জেলেদের প্রাচীন গ্রাম – Styrsö Tången, তার অপূর্ব দৃশ্যের ডালি সাজিয়ে স্বাগত জানায়। অক্টোবরের তীব্র শীতেও দেখি কয়েকজন বাড়ীর সামনে মাটি কেটে চাষের জমি তৈরি করছে।
এই দ্বীপের উদার নীল নির্জনতা, এখানের মানুষের জীবন যাপনের নিমগ্নতা, একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নতা দেখে মনে হয় সত্যিই কি এরা এই গতিময় একবিংশ পৃথিবীর বাসিন্দা? সারাটা জীবন সেই দ্বীপেই কাটিয়ে দেবে? আমরা তো ওদের দেখে এলাম ওরা কেমন ভাবে থাকে – ওরা কি কখনো ওদের সেই দ্বীপ ছেড়ে আমাদের জীবন যাপনে উঁকি দিতে আসবে? কে জানে? পৃথিবীর পথে মানুষের পদক্ষেপ গুলো বড়ই অদ্ভুত, বড়ই অচেনা। আর সেই অচেনা পদক্ষেপই হয়তো পৃথিবীকে করেছে রহস্যময়, আরও সুন্দর।
চমৎকার!
ধন্যবাদ