তুষার স্বর্গ তিতলিসে (Mount Titlis, Switzerland)

সুইজারল্যান্ডে পশ্চিম আল্পসের তুষার ধবল তিতলিস পাহাড় চূড়ায় পৌঁছনোর কেবল কারে বসে উপরে যেতে যেতে প্রথম ষ্টেশনে কিছুক্ষনের জন্যে কেবল কার থামলে, সেখানে হিন্দিতে সতর্ক বানী লেখা দেখে এতো উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম যে ‘তিতলিস পাহাড় কি চটি পড়, কৃপয়া বৈঠে রহে’ লেখা দেখে সেখানেই একটু হলে নেমেই পড়েছিলাম আর কি। Engelberg থেকে কেবল কারে দুই ধাপে দশ হাজার ফিট উচ্চতার তুষার স্বর্গ তিতলিস পাহাড়ে পৌঁছনো যায়। কেবল কারে বসে উপর থেকে Engelberg এর অপরূপ দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়।

দ্বিতীয় ধাপে পৃথিবীর সর্ব প্রথম ঘুরন্ত গোন্দোলা – Rotair এ চড়ার উৎসাহে অনেকেই দেখি টগবগ করে ফুটছে। গোন্দোলাটি রোপ ওয়ে দিয়ে যেতে যেতে ধীরে ধীরে নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘোরে – তিতলিসে এসে সুইস ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশংসা করেও শেষ করা যায় না, চারিদিকে ছড়িয়ে আছে সুইস ইঞ্জিনিয়ারিং কেরামতি। ঘুরন্ত গোন্দোলার কাঁচের জানালায় দাঁড়িয়ে আল্পসের উদার শ্বেত সৌন্দর্যে উপস্থিত সবারই মুখ থেকে শুধু প্রশংসা ধ্বনিই শোনা যায়, ক্যামেরার শাটারের আওয়াজে ভরে যায় গোন্দলার ভেতর। আবার দেখি ভেতরেও হিন্দিতে লেখা – স্বাগত।

এখানে এতো তুষার খেলার আয়োজন যে ঠাণ্ডা বিন্দু মাত্র অনুভূত হয় না। প্রচুর টুরিস্ট শুধু স্কি করার জন্যেই এখানে ভিড় করেছে। এই তুষার স্বর্গের হাতছানিতে প্রতি বছর কত যে টুরিস্ট ঘর ছাড়া হয় তাঁর সঠিক হিসাব আমার জানা নেই। তবে তিতলিস পাহাড়ের পাদদেশ Engelberg এ প্রচুর টুরিস্ট বাস দেখে অনুমান করাই যায়।

উপরে পৌঁছেই রেস্টুরেন্টের উষ্ণতায় কাঁচের জানালার পাশে বসে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে তিতলিসের সৌন্দর্য উপভোগ করার মধ্যে যে অদ্ভুত উষ্ণ আনন্দ, সেই আনন্দটিকে ঠিক ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। খুব ঠাণ্ডা থেকে এসে যে এক কাপ গরম কফির কাপে চুমুক দিয়েছে সেই জানে, আর সেই উষ্ণ অনুভূতিটিও যেন আমার ভ্রমণ সঙ্গী হয়ে যায়। রেস্টুরেন্টের পাশেই আছে স্যুভেনিরের ছোট্ট দোকান।

দায়সারা ভাবে দোকান দেখে নিয়ে আলোকিত বরফ পথে গ্লেসিয়ার গুহায় ঢুকে পড়ি। এই গ্লেসিয়ার গুহার ভেতরে গলির মোড়ে আবার এক জায়গায় নানা দেশের জাতীয় সঙ্গীত শোণার যন্ত্র বসানো, সবাই একবার নিজের দেশের জাতীয় সঙ্গীতের বোতাম টিপে গ্লেসিয়ারের ভেতরে সুর ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমিও আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীতের সুর ছড়িয়ে দিলাম তিতলিস গ্লেসিয়ারের গুহায়।

তিতলিসের একদিকে আছে Ice Flyer। খোলা চেয়ারে বসে অনেকটা উড়ে যাওয়ার মতোই ব্যপার। সে এক দারুন অভিজ্ঞতা, নীচে তুষারাবৃত খাড়া পাহাড়, ঠাণ্ডা হাওয়া চিরে দেয়, রেলিঙে রাখা হাত দুটো অবশ হয়ে যায় – তবুও চড়া চাই সেই Ice Flyer এ। নইলে যে ভ্রমণ অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ হয় না। Ice Flyer এ বসে উপর থেকে অপূর্ব দৃশ্যে মুগ্ধ হতেই হয়। প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে শিল্পীর কল্পনার সৌন্দর্যও যেন হার মানে।

উজ্জ্বল দিনে তুষারের উপর রোদ যেন চোখ ঝলসে দিচ্ছে। ঝকঝকে নীল আকাশ, স্বচ্ছ দিনে যত দূর চোখ যায় শুধুই তুষার আর তুষার। নানা বয়সী মানুষের আনন্দ কোলাহলে ভরে আছে তিতলিস পাহাড় চূড়া। মনে হয় স্বর্গ সুন্দর তো এখানেই, এই পৃথিবীর বুকে যা কিছু সুন্দর তাই তো স্বর্গের সৌন্দর্য। আর সেই মহান সৌন্দর্যকে ধরে রাখার দায়িত্ব মনুর পুত্রদের উপরেই নিহিত হয়েছে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Switzerland, Travel and tagged , , , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s