আল্পসের কোলে তিতলিস পাহাড়ের ঢালে এক ছোট্ট সুন্দর ছবির মতো এই সুইস গ্রাম – Engelberg এ এসে মনে হয় কোন এক স্বপ্নের দেশে চলে এসেছি, আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয় যেন কোন এক কল্প বাস্তবের পথে হেঁটে চলেছি।
সুইস আল্পসের ঢালে বহু প্রাচীন এই গ্রামটি বর্তমানের এক জনপ্রিয় টুরিস্ট গন্ত্যব্য। এখানে বহু প্রাচীন এক Benedictine মঠ আছে। সেখানে এখনো কয়েক জন মঙ্ক প্রাচীন ভাবে থাকে। দূর থেকে সেই মঠের সাদা কালো চূড়া দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
প্রতিটি ঘর বাড়ী, সৌন্দর্য যেন বহু যত্নে সাজানো। গ্রামের প্রেক্ষাপটকে আরও সুন্দর করেছে তুষারাবৃত খাড়া আল্পস পাহাড় শ্রেণী। সুইজারল্যান্ডে এসে যে কোন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মনে হয় যেন মানুষের হাত লেগেছে, কোথাও অগোছালো বন্য সৌন্দর্য দেখা যায় না। প্রতিটি সৌন্দর্যই এতো নিখুঁত, ভগবানের অসীম প্রাকৃতিক দান ওরা বহু যত্নে সাজিয়ে রাখতে জানে। মনে হয়, সুইস আল্পসের প্রতিটি কোণা সুইস সরকারের নখ দর্পণে। পাহাড়ের ঢালের উদার সবুজ ঢালু মাঠের ঘাসও বহু যত্নে ছাঁটা হয়েছে। আর সেই সুরক্ষিত সৌন্দর্যের টানে এই গ্রামে গরমে, শীতে বহু টুরিস্ট ভিড় করে।
নিশ্চিন্তে শান্ত গ্রামের পথে হেঁটে যাওয়া যায় বহু দূর, পাহাড়ের পাকদণ্ডী দিয়ে আল্পসের ঢালে হারিয়ে যাওয়া যায়। গরমে হাইকিং, শীতে স্কি – এই গ্রামের অন্যতম বিনোদন। গ্রামের ভেতরে দেখা যায় সুইস চীজ তৈরির কারখানা, মঠ, সুইস জীবনের ছবি। তবে, বেশীরভাগ টুরিস্টদের এই গ্রামে আসার প্রধান কারণ এই গ্রামের প্রান্তে আল্পসের উপরে যাওয়ার কেবল কার ষ্টেশন। এখানে কেবল কার নিয়ে তিতলিস সহ অন্যান্য হিল স্টেশনেও যাওয়া যায়।
তিতলিস থেকে নেমে এসে যতটা পারি এই গ্রামের সৌন্দর্য দেখে নিতে পা বাড়াই গ্রামের পথে। অপূর্ব দৃশ্যের মধ্যে এই গ্রামের পথে হাঁটতে হাঁটতে ফুসফুস ভরে নি সুইস বাতাসে, ছোট্ট চঞ্চল পাহাড়ি নদীটির পাশ দিয়ে যে পথটি চলে গেছে সেই পথে চলি।
ঘড়ির কাঁটার ছন্দে ছন্দে যে আমাদের জীবনের ছন্দ বাঁধা, তাই মনে হয় খুব তাড়াতাড়িই ফেরার সময় হয়ে যায়। ছোট্ট সুন্দর গ্রামটিকে বিদায় জানিয়ে ফিরি নিজের পথে। তবে, বেড়ানোর মুহূর্ত গুলো যেন জীবনের এক ছবির ফ্রেম হয়ে যায়, যেখানে সময় যেন থমকে যায়। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে যখনই ভ্রমণের ঝুলি খুলে সেই সময়কে ফিরে দেখি, সেই থমকে যাওয়া সময়কেই পাই, ভালো লাগে।