উজ্জ্বল দিনে পাহাড়ের উপরের এই প্রাসাদের চত্বর থেকে দেখা যায় বিখ্যাত দানিয়ুবের উদার প্রসারিত দৃশ্য, ব্রাতিস্লাভার শহুরে প্রসার, স্লোভাকিয়ার জীবন ছবি। দেখা যায় অষ্ট্রিয়ার পাহাড় শ্রেণী, আবার আরও স্বচ্ছ উজ্জ্বল দিনে হাঙ্গেরিরও কিছু অংশও দৃশ্যমান হয়।
স্লোভাকিয়ার রাজধানী শহর ব্রাতিস্লাভায় ঢোকার মুখেই পাহাড়ের উপরের এক চতুর্ভুজাকার ঝকঝকে সাদা প্রাসাদ নজর কেড়ে নেয়। দানিয়ুবের তীরের এই শহরটি ঐতিহাসিক সময়ে গুরুত্ব পূর্ণ ব্যবসা বানিজ্য কেন্দ্র ও বানিজ্য পথ হিসাবে ব্যবহার হত। এই প্রাসাদ পাহাড়ে প্রাগৈতিহাসিক সময়ের মানুষের বসবাসের নিদর্শন পাওয়া গেছে। জানা যায়, লৌহ যুগের শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত এই ক্যাসল পাহাড় এক গুরুত্ব পূর্ণ কেন্দ্র ছিল।
দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাসাদ ধ্বংসের মুখেই ছিল, নেপোলিয়ানের সৈন্যরা এই ক্যাসলের উপরে কামান দেগেছিল, সেই আগুন ব্রাতিস্লাভা শহরেও ছড়িয়ে গিয়েছিল। বহুবার এই ক্যাসল ভেঙ্গে নতুন স্থাপত্য তৈরির প্রস্তাব হয়েছিল। দুই বিশ্ব যুদ্ধ এই প্রাসাদের প্রচুর ক্ষতি করেছিল, সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই প্রাসাদ ধ্বংসের শেষ ধাপে ছিল। কিন্তু, শেষে স্লোভাকিয়া এই প্রাসাদের পুরনো গৌরবকে পুনরায় স্থাপন করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আর সেই সিদ্ধান্তের ফলেই এই ঝা চকচকে ঐতিহাসিক প্রাসাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা।
এবং আজও এই প্রাসাদ স্লোভাকিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কেন্দ্র। চার স্তম্ভ যুক্ত বিশাল এই রাজপ্রাসাদ এখন স্লোভাকিয়ার ন্যাশনাল মিউজিয়াম। হাঙ্গেরির রাজমুকুট সহ স্লোভাকিয়ার সমস্ত অমূল্য ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন এই প্রাসাদে সুরক্ষিত আছে।
এই প্রাসাদে আর আছে প্রাগৈতিহাসিক সময়ের এক মূর্তি Venus of Moravany। প্রস্তর যুগের শুরুর দিকে ম্যামথের দাঁত দিয়ে তৈরি এই নারী মূর্তিটির ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।
যাইহোক, সন্ধ্যার মুখে ক্যাসল চত্বরে খুবই কম মানুষের আনাগোনা, যে কয়েক জনকে দেখা যাচ্ছে সবাই টুরিস্ট। পাথরের তৈরি ক্যাসল চত্বরে দাঁড়িয়ে উদার দানিয়ুবের বয়ে চলা দেখছে অনেকেই। মৃদু হাওয়া ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে উপস্থিত জনতাকে। এক নির্জন শান্ত নীল সন্ধ্যাকে স্বাগত জানিয়ে ব্রাতিস্লাভা শহর কেন্দ্রের দিকে পা বাড়াই।