শেষ দুপুরের হলুদ রোদের তেড়ছা আলো এসে পড়েছে ঐতিহাসিক দরদালনে, আর সেই রোদ কারুকার্য ভরা বড় বড় থাম দেওয়া টানা বারান্দায় সৃষ্টি করেছে আলো ছায়ায় অদ্ভুত কারিকুরি। হলুদ সেই আলো ছায়া ঘেরা হলুদ গথিক দর দালান কেমন এক মনখারাপ করিয়ে দেয়, এক নস্টালজিক অনুভূতিতে ছেয়ে যায় মন। ক্লান্ত হলুদ দুপুরে সময় এখানে যেন থমকে আছে কোন এক পুরাতন সময়ে। আর সেই পুরাতন সময়ের টানে কত মানুষ যে এই দর দালানে টহল দিয়েছে তাঁর হিসাব কে রাখে?
লিসবনের বালেম অঞ্চলে Tagus নদী তীরে যে সমস্ত ঐতিহাসিক স্থাপত্য নজর কেড়ে নেয় বা টুরিস্টরা যে সমস্ত স্থাপত্য দেখতে ভিড় করে তাঁদের মধ্যে Jerónimos Monastery কে অন্যতম প্রধানই বলা যেতে পারে। বিশাল এই মঠ পর্তুগীজ গথিক স্থাপত্যের নিদর্শন। ইউনেস্কো যে স্থাপত্যকে হেরিটেজের সম্মান দিয়েছে, তাঁর সৌন্দর্যে বিস্ময়-মুগ্ধ হওয়া ছাড়া অন্য উপায় তো নেই। তাই বিশাল মঠের আনাচে কানাচে টুরিস্ট ক্যামেরা হাতে ঘোরে – কোন এক অবাক বিস্ময়ের খোঁজে।
লিসবন থেকে দুপুরের দিকে যখন বালেম অঞ্চলে পৌঁছলাম Monastery র বাইরে প্রচুর টুরিস্টের আনাগোনা দেখে Jerónimos Monastery ভেতরে ভিড়ই আশঙ্কা করেছিলাম, কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখি অদ্ভুত শান্ত ঠাণ্ডা পরিবেশ।
ষোল শতাব্দীতে এই মঠের কাজ শুরু হয়ে, প্রায় একশো বছরে সম্পূর্ণ হয়েছে। এই মঠের মঙ্কদের কাজ ছিল রাজা ও নাবিকদের জন্যে প্রার্থনা করা। বিশেষ করে যে নাবিকেরা নতুন দেশ আবিষ্কারের জন্যে অভিযানে যেত, তাঁদের জন্যে চার্চে প্রার্থনা করা রীতিমত এক অনুষ্ঠান ছিল। আর সেই জন্যেই মনে হয় রাজ পরিবার ও ভাস্কো দা গামার সমাধি এই মঠে আজও সুরক্ষিত ভাবে রাখা।
আধো আঁধারে ঘেরা চ্যাপেল থেকে বেরিয়ে টানা বারান্দার উজ্জ্বল ঝকঝকে সৌন্দর্যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। টানা বারান্দায় পর্তুগীজ গথিক স্থাপত্যের থাম গুলোর সুক্ষ কারুকার্যে রোদ পড়ে যে অপূর্ব অদ্ভুত আলো ছায়া পথ তৈরি হয়েছে, সেই আলো ছায়া ময় হলুদ পথে হেঁটে যেতে যেতে এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতি হয় – রোমাঞ্চকর এক নস্টালজিক অনুভূতি। নিতান্তই বাঙালি এক অনুভূতির সঙ্গে পর্তুগীজ মঠের বারান্দায় হেঁটে যাওয়ার আন্তর্জাতিক অনুভূতির এক সংমিশ্রণ হয়। ইতিহাস নয়, ভবিষ্যৎ নয় – শুধু বর্তমানের এই অপূর্ব মুহূর্তটিকে অনুভব করে জীবনের স্মৃতি ধনের ভাঁড়ার পূর্ণ করাই যেন সেই ক্ষণের উদ্দ্যেশ্য হয়ে দাঁড়ায়।