একে তো হাঁসেরা খেতে খুব ভালোবাসে, দেখবে একটা হাঁস সারাদিনই খেয়ে যায়। আর অত্যধিক খাওয়ার জন্যে এমনিতেই হাঁসের মাংসে ও লিভারে খুব চর্বি হয়। আর ফ্রান্সে কি করে? হাঁসদের ধরে ধরে জোর জবরদস্তি করে প্রচুর খাওয়ায়, হাঁসের মুখে পাইপ ঢুকিয়ে দিয়ে জোর করে খাবার খাওয়ায়, প্রচণ্ড ভাবে ওভার ফিডিং করায়, এতে কি হয়!
হাঁসেদের লিভারে প্রচুর প্রচুর পরিমাণে চর্বি জমে, এতো ফ্যাট জমে যে ফ্যাটি লিভার হয়ে হাঁস মরেই যায় – তখন হাঁসদের এই ফ্যাট ভর্তি লিভারকে বলে – ফুয়া গ্রা (Foie gras), হাঁসের লিভারে যতই ফ্যাট হয়, ফুয়া গ্রা ততই একদম মাখনের মতো মিহি হয়ে যায়, আর ততোই তার দাম বাড়ে।
ব্রেডের উপরে লাগিয়ে, বা স্যালাডের সঙ্গে টুকরো করে ক্রিসমাসের সময় এই ফুয়া গ্রা খাওয়াই ফরাসী ডেলিকেসি, ফরাসীদের সুখাদ্য সংস্কৃতির এক অবিছেদ্য অঙ্গ এই ‘ফুয়া গ্রা’। অবশ্য, হাঁসদের সঙ্গে এই বর্বর ব্যবহারের জন্যে ইউরোপের অনেক জায়গায় ফুয়া গ্রা নিষিদ্ধ খাবার। আর, আজ আমি সেই ফুয়া গ্রা বানিয়েছি তোমাদের জন্যে – বলে কাকিমা যখন বড় প্লেটে করে ফুয়া গ্রা লাগানো ব্রেডের টুকরো গুলো এগিয়ে দিলেন, পুনের বন্ধুটির জ্বলজ্বলে হাসিমুখ কেমন যেন নিভে গেল। মুখের সামনে এক টুকরো ফুয়া গ্রা লাগানো ব্রেড ধরেও কামড় না দিয়ে হাতে ধরে রইল।
নিমন্ত্রিত আমরা, যারা প্রথম ফুয়া গ্রায় কামড় বসিয়েছি গল্পটা শুনে তাঁদের অনেকেরই অবস্থা অনেকটা ‘খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না’র মতো হয়ে গেলো। তবে, হাঁসের মাংস খেতে যখন আপত্তি নেই, ফুয়া গ্রা খেতে খুব একটা আপত্তি থাকার তো কথা নয়, তাই, কাকিমার বাড়িয়ে দেওয়া প্লেট নিমেষে খালি হয়ে গেল। তাছাড়া, ফ্রান্সের আইনে তো বলেই দিয়েছে ‘Foie gras belongs to the protected cultural and gastronomical heritage of France’, তাহলে আর আপত্তি কিসের।
তা বলে, ফুয়া গ্রা তৈরির বর্বরতাকে সব ফরাসীরা যে প্রশ্রয় দেয় তা নয়, ক্রিসমাসের সময় প্যারিসের বহু বড় হোটেলের সামনে ফুয়া গ্রা তৈরি, ও খাওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়। যাইহোক, ইউরোপের অন্য জায়গায় যে যাই বলুক না কেন, ক্রিসমাসের আগে তুলুসের সমস্ত বাজার ভরে যায় ‘ফুয়া গ্রা’ দিয়ে। নববর্ষে বাঙালি একটুকরো পাঁঠার মাংস না খেয়ে যেমন মনখারাপ করে তেমনি ফরাসীরা ক্রিসমাসের সময় এক কামড় ফুয়া গ্রা না পেলে মুখ গোমড়া করে। যতই হোক – আপ রুচি খানা।