ফ্রান্সের খাওয়া দাওয়ায় খুব বেশী স্থানীয় প্রভাব দেখেছি, যেমন দক্ষিণ ফ্রান্স তথা তুলুসের খাওয়া দাওয়া নিয়ে যখনই আলোচনা হয়েছে, প্রথমেই শুনেছি ক্যাসুলের কথা। বিশেষ করে কারকাসনে শহরে গিয়ে দেখেছি প্রায় প্রতিটি ফরাসী রেস্তোরাঁয় প্রধান খাবারই ক্যাসুলে। আর এই বিশেষ খাদ্যটির উৎপত্তিও দক্ষিণ ফ্রান্সের এই তুলুস, কারকাসনে, কাস্তালনেদারি অঞ্চলে। আর এরা এদের স্থানীয় খাওয়া দাওয়া নিয়ে খুবই গর্বিত। তুলুসের খাদ্যরসিক ফরাসী বন্ধুদেরকে ক্যাসুলের স্বাদ নিয়েছি বললে, ওরা অনায়াসে কয়েক মিনিট ধরে ক্যাসুলের আলোচনা করে যেতে পারে।
বিশেষ ধরণের সাদা বিন, হাঁসের মাংস বা ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি প্রচণ্ড চর্বি যুক্ত খাদ্য এই ক্যাসুলে। ক্যাসারোলের মধ্যে কম আঁচে, অনেক সময় নিয়ে তৈরি হয় এই ক্যাসুলে – ক্যাসারোলের মধ্যে তৈরি হয় বলেই এই পদের নাম ক্যাসুলে। দক্ষিণ ফ্রান্সের নানা জায়গায় নানা ভাবে নানা ধরণের মাংস দিয়ে এই পদ তৈরি হয়। জায়গা ও রান্নার ধরনে ক্যাসুলের স্বাদ ও গন্ধ বদলে যায়। আবার প্রচণ্ড চর্বি যুক্ত এক বাটি ক্যাসুলে খেলে নিমেষে ডিসেম্বরের হাড় হিম ঠাণ্ডা দূর হয়ে যায়।
সেবার অ্যান্টিকে যখন বললাম – কারকাসনে গিয়ে ক্যাসুলে খেয়েছি, শুনেই অ্যান্টি হাঁ হাঁ করে বললেন, ‘আরে, আরে আমি তোমাদের ক্রিসমাসের আগে ক্যাসুলে করে খাওয়াবো, আমার ফরাসী বন্ধুর কাছ থেকে শেখা আসল ফরাসী রেসিপি, অনেক সময় লাগে তৈরি করতে, দেখো একবার আমার হাতের তৈরি ক্যাসুলে খেয়ে।’
আসলে, যে কোন রান্নাকে তার উৎপত্তি স্থানের স্বকীয়তা বজায় রেখে, আসল স্বাদ গন্ধকে অটুট রেখে রান্না করতে খুব কম মানুষই পারে। অনেক সময়েই রাঁধুনির নিজস্ব স্বাদের প্রভাব পড়ে যায় তার তৈরি খাবারে। যে কোন জায়গার আসল স্বাদ বজায় রেখে সেই জায়গার পদ রান্না করাটাও যে এক বিরাট শিল্প, এক সাধনা, এক তীব্র সংযম।
আর, সেই শিল্পে অ্যান্টির হাতে যাদু তৈরি হয় – তৈরি হয় ক্যাসুলে। যে কোন ফরাসীকে টেক্কা দিতে পারে অ্যান্টির হাতে রান্না করা ক্যাসুলে। ক্যাসুলের স্বাদে কোথাও ভারতীয়ত্বের বা বাঙ্গালিয়ানার ছোঁয়া নেই। ফরাসী রান্নার ফরাসিত্ব বজায় রাখার জন্যে অ্যান্টির রান্নার হাতে অদ্ভুত সংযম।
ডিসেম্বরের ঝকঝকে দুপুরে, দিনটি যদিও ক্যাসুলে খাওয়ার জন্যে উত্তম নয় তবুও ঠাণ্ডা তো, ফরাসী ব্রেড সহযোগে ক্যাসুলের স্বাদে ডুবে যায় ছুটির দুপুর।