এখানে বসন্তের প্রকৃতি বড়ই রঙিন, উজ্জ্বল। আর তেমনি ধূসর দীর্ঘ শীত বড়ই বিষণ্ণ, বদ্ধ, বড়ই মন খারাপের দিন। শীতের প্রায় দিনই দেখি প্রকৃতি এক ধূসর চাদরে মুখ ঢেকে থাকে, আর সেই দীর্ঘ শীতের সময়ে মাটির নীচে প্রস্তুতি নেয়, বসন্ত প্রকৃতির আশ্চর্য এক উপহার – ড্যাফোডিল। শীত যখন যাই যাই করে, মাটির নীচে ড্যাফোডিলের বাল্ব শীত ঘুম থেকে জেগে ওঠে, মাটি ভেদ করে, আর তখনই উঁকি দেয় এই উজ্জ্বল ফুলের গাছটি।
ইউরোপে ড্যাফোডিল নিয়ে আসে বসন্তের আগমন বার্তা। তারপরেই ইউরোপের চারিদিকে শুরু হয়ে যায় নানা ফুলের রঙের খেলা। Narcissus গোত্রের এই ফুলের প্রায় পঞ্চাশটি প্রজাতি ও প্রায় তেরো হাজার হাইব্রিড প্রজাতি আছে। যদিও এই ফুলের আসল জায়গা ইউরোপের মেডিটেরিয়ান অঞ্চল, কিন্তু সারা ইউরোপেই এই ফুলের দেখা পাওয়া যায়, অবশ্য এখন সারা বিশ্বে এর চাষও হয়। যদিও এর আসল রং হলুদ, কিন্তু ইউরোপে কমলা, সাদা, হালকা গোলাপি রঙের ড্যাফোডিলও দেখা যায়। সাধারণত মাটির নীচে অন্যান্য ফুলের বাল্ব নষ্ট হয়ে যায়, বা ইঁদুর, খরগোশরা খেয়ে নেয়, কিন্তু ড্যাফোডিলের বাল্ব ঐ ধরণের পশুর পক্ষে বেশ ক্ষতিকারক, বিষাক্ত। তাই এই ফুলের চাষ করাও তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশী সহজ।
মাটি ভেদ করে উঠে আসা গাছ গুলো কিছুদিন হাওয়ায় মাথা দোলাতে না দোলাতেই ফুটিয়ে দেয় বছরের প্রথম উজ্জ্বল হলুদ ড্যাফোডিল ফুল – বুঝি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। যাওয়া আসার পথে বাড়ীর পাশের মাঠটি দেখি কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ হলুদ হয়ে যায়।
উজ্জ্বল সোনালি দিন, মাটির কাছে হলুদ ফুলের হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথা দোলানো, বাতাসে উষ্ণতার ছোঁয়া – সব মিলিয়ে বসন্ত যেন এখানে নিয়ে আসে এক নব জীবনের ছোঁয়া, উৎসব মুখরতা। কোন এক রূপকথার যাদু কাঠিতে এখানে প্রকৃতির সবই যেন সুন্দর হয়ে ওঠে। তাই এখানে ড্যাফোডিলের ফুটে ওঠা মানে বন্ধুত্ব, নতুন শুরু বা নব জীবনের এক প্রতীক। বসন্ত দিনে হালকা বাতাসে মাথা দোলাতে দোলাতে যেন হাতছানি দেয় অপূর্ব হলুদ ড্যাফোডিলরা – যেন বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসো, প্রকৃতির কাছে ফিরে এসো।