হেলসিঙ্কি শহর কেন্দ্রের বাজার এলাকায় এসে একটু দূরে, পাহাড়ের উপরে লাল ইটের তৈরি এক চার্চের ঝকঝকে, সোনালি, উঁচু, পেঁয়াজ আকৃতির গম্বুজ চূড়া অতি সহজেই দৃষ্টি কেড়ে নেয়, আর স্বভাবতই প্রচুর ভ্রমনার্থি পাহাড়ি পথ ধরে সেই দিকেই এগিয়ে যায় – এই চার্চ অনেকটা যেন হেলসিঙ্কির প্রতীক। শুধু বাজার এলাকা নয়, হেলসিঙ্কির অনেক জায়গা থেকেই পাহাড়ের উপরের উঁচু এই চার্চ নজরে পড়ে।
মস্কোর রাশিয়ান চার্চের আদলে তৈরি এই ক্যাথিড্রাল পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে বড় গোঁড়া ক্যাথিড্রাল হিসাবে গণ্য। এই চার্চের অঙ্গ সজ্জায় পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের সংমিশ্রণ ঘটেছে। রবিবারের সোনালি সকালে অনেকেই দেখি সেজে নিয়ে চার্চে প্রার্থনায় পৌঁছে গেছে। যেহেতু, গোঁড়া চার্চ তাই চার্চে প্রার্থনা চলার সময় সাধারণ টুরিস্টদের ঢোকা ও ফটো তোলা নিষেধ, তবে প্রার্থনা শেষে চার্চে ঢুকে অন্দর সজ্জার দিকে চোখ বুলিয়ে নিতে, ফটো তুলতে কোন বাধা নেই।
দামী ঝালর বাতি, সোনালি ফ্রেমে যীশুর জীবনের দামী ছবি ইত্যাদি দিয়ে এই চার্চের ভেতর খুবই আভিজাত্যময়, এই চার্চের অন্দর সজ্জা ইউরোপের অন্যান্য চার্চের অন্দর সজ্জার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। শোণা যায়, ২০০৭ এর এক দিন দুপুরে এই চার্চের এক মূল্যবান ছবি (icon) চুরি হয়ে যায় – চুরির সময় চার্চে প্রচুর টুরিস্টও ছিল, কয়েক কিলোগ্রাম ওজনের এই ছবিটি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় হেলসিঙ্কিতে এসেছিল, বহু খুঁজেও উনিশ শতকের সেই দামী ছবিটির কোন হদিশ পাওয়া যায় নি।
যাইহোক, রাশিয়ান আর্কিটেক্ট Aleksey Gornostayev এর নক্সায় উনিশ শতকে তৈরি এই লাল চার্চ হেলসিঙ্কির এক ক্রিস্টিয় গর্বই বলা যায়। সারা বছর বহু মানুষ শুধু এই চার্চ দেখতেই আসে।
জুলাইয়ের রবিবারের সকালের সোনালি আলোয় লাল ইটের চার্চটি যেন রোদ্র স্নান সেরে নিচ্ছে, জুলাই মাসের সকালেও হাওয়ায় হালকা ঠাণ্ডার ছোঁয়া, চার্চের খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রোদ গায়ে নিতে নিতে তাই উপর থেকে হেলসিঙ্কি শহরের প্রাণ স্পন্দন দেখতে বহু টুরিস্ট চার্চের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।