ইউরোপের কোন এক দেশের একটি সেতুর লোহার রেলিং এ একটি তালা ঝুলছে কোন এক যুগলের। হয়তো, যুগ্ম জীবনের শুরুতে হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে যুগলে মিলে তালাটি লাগিয়েছিল – আর চাবিটি ছুঁড়ে দিয়েছিল নীচের নদী স্রোতে, ইউরোপিয়ান যুগলের কাছে এর চেয়ে রোম্যান্টিক বোধহয় আর কিছু হতে পারে না।
তাইতো, ভালোবাসার শহর প্যারিসের সেতু তো তালার ভারে বেশ কয়েকবার ভেঙ্গে পড়েছিল – এমনকি লোহার সেতুতে ভালোবাসার প্রকাশ ‘লাভ লক’ লাগানো থেকে যুবক যুবতীদের বিরত করতে লোহার সেতুতে পুলিশও মোতায়েন করতে হয়েছে প্যারিস শহর কর্তৃপক্ষকে।
কিন্তু, হেলসিঙ্কি সেই দিক থেকে খুবই উদার। হেলসিঙ্কির মানুষের জন্যে Vantaa নদীর এক অংশের উপরে লোহার সেতু Rakkauden Silta বা Bridge of Love কে ভালোবাসার উদার প্রকাশ, মানে তালা ঝোলানোর জন্যেই নিবেদন করেছে হেলসিঙ্কি কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ান নক্সায় তৈরি Uspenski ক্যাথিড্রালের পাশেই পায়ে হাঁটা এই ভালোবাসার সেতু।
তাই এখানে, নানা রঙের রকমারি তালা হাজার অনামি যুগলের ভালোবাসার দৃঢ় বন্ধনকে রোদ, বৃষ্টি, তুষার পাত, ঠাণ্ডা সবই উপেক্ষা করে প্রকাশ করে যায়। এক একটি তালায় আবার নাম, তারিখ লেখা, কোন কোন তালা আবার শৈল্পিক সৌন্দর্যে ভরপুর। যার কাছে তালা নেই, সে নিদেন পক্ষে একটা ফিতে হলেও বেঁধে যায় এই সেতুতে।
ঠিক কবে থেকে বা সর্বপ্রথম কে ইউরোপের লোহার সেতু গুলোতে এই ধরণের ভালোবাসার তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার প্রচলন করেছে – তার কোন ঐতিহাসিক তথ্য নেই, তবে ইউরোপের যেখানেই গেছি এই ধরণের অদ্ভুত তালা ঝুলতে দেখেছি।
তালা ঝোলানো ব্যাপারটি খুবই সাধারণ, কিন্তু যখন নানা রঙের অনেক তালা একসঙ্গে দেখা যায় বেশ সুন্দর এক ছবি তৈরি করে বই কি। অবশ্য, অনেক ইউরোপের শহর কর্তৃপক্ষ বলে অত্যাধিক তালা ব্রিজের ওজন বাড়িয়ে দেয়, ব্রিজের ক্ষতি করতে পারে – কিন্তু, কে শোনে কার কথা। তালা ঝোলানোর সংখ্যা যে বেড়েই চলেছে। এমনকি, হেলসিঙ্কিতে নিজের চোখে দেখেছি দলে দলে জাপানি টুরিস্ট এসে Bridge of Love এ তালা ঝুলিয়ে দিল, যেন ওরা তৈরি হয়েই এসেছিল।
মানুষ কোথাও এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারে না, নদীর মতো বয়ে যায় জীবন, তাই বোধহয় মানুষ স্থিরতাকে বড় ভালোবাসে। আর ভালোবাসে পৃথিবীর বুকে তার ভালোবাসার গল্পকে স্থায়ী করে যেতে, সবাই তো আর তাজমহল তৈরি করে যেতে পারে না, তাই ভালোবাসার প্রকাশই যখন আসল – এক ছোট্ট তালাই সই।