অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রের দক্ষিণে ইতালির এই শহরটি পৃথিবীর সবচেয়ে রোম্যান্টিক শহর হিসাবে খ্যাত। অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রের নোনা জলে এই শহরের অলি গলি নিমজ্জিত, সমুদ্রের জল এখানে এসে শ্যাওলা সবুজ রঙ ধরে। আর সেই ঘোলা সবুজ জলে ইতালিয়ান গান গেয়ে, সাদা কালো ডোরাকাটা জামা গায়ে এই শহরের বহু যুবক গান্দোলা বায়। ভেনিসের সেই গন্দোলা চালকেরা যে কত চলচিত্রকে দৃশ্যের যোগান দিয়েছে তার হিসাব কে রাখে।
ভেনিসকে ভালো ভাবে দেখে নিতে হলে অতি অবশ্যই জল পথে ভেসে নিয়েই দেখতে হয়। সেদিন ঠিকই করে নিয়েছিলাম – সারা বিকেল শুধুই জলে ভাসবো, জলে ভাসতে ভাসতে ভেনিসের বুকে সন্ধ্যে নামার সাক্ষী হব। এখানে লোকেরা বাড়ী থেকে নেমেই জলের গলিতে বেঁধে রাখা মোটর বোটে চড়ে বসে, সেই মোটর বোট আবার ভাড়াও নেওয়া যায়। তাছাড়া, ষ্টীমার ভেনিসের জাতীয় পরিবহণ।
দু’পাশের নোনা ধরা ইটের তৈরি শতাব্দী প্রাচীন বাড়ীর মাঝে সবুজ জলের গলি ধরে ভেনিসের জনজীবনে উঁকি দিতে দিতে জলে ভেসে চলেছি। সঙ্গে চলেছে এক জলজ শ্যাওলা গন্ধ ও দেওয়ালের গায়ে জলের ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ ভাঙ্গার ছলাৎ শব্দ। কেমন এক জং ধরা অতি পুরনো এক এন্টিক সৌন্দর্য এই শহরের জলজ গলির মোড়ে মোড়ে। কোথাও বা সেই জলের গলি বাঁক নিয়েছে। জলজ ভেনিসের মানুষদের জীবন যাপনের মধ্যেও যেন কেমন এক ভাটিয়ালী সুর।
ভেনিস পাসের জন্যে ষ্টীমারে করে যথেচ্ছ জল ভ্রমণের ছুট আছে আমাদের। তাই, একঘণ্টার গন্দোলা ভ্রমণ সেরে নিয়ে চেপে বসলাম ষ্টীমারে। কোনও ষ্টীমার ঘাটে না নেমে, ষ্টীমার চালকের কেবিনের পাশে বাইরের দিকে একদম সামনেই যে সমস্ত খালি চেয়ার পাওয়া গেল সেগুলোই দখল করে বসলাম।
এবার আমাদের বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধুই জল ভ্রমণ। দিগন্তে ভেনিসের প্রেক্ষাপটে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের জলে, শেষ বিকেলের কমলা সূর্যের আলো যেন গুড়ো গুড়ো হয়ে মিশে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে সূর্য যায় অস্তাচলে। যেখানে, ভেনিসের গ্র্যান্ড ক্যানালের জল এসে অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রে মিশেছে – কেমন এক শান্ত উদাসীন অনন্তের হাতছানিতে মন হতে চায় ভবঘুরে।
জল পথে ভেনিসের নানান ষ্টীমার ঘাট ছুঁতে ছুঁতে, ভেনিসিয়ান জন জীবনের ছবি দেখতে দেখতে, অস্তরাগী সূর্যের লাল রঙ অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রের সবুজ জলে মিশে যাওয়া দেখতে দেখতে, সন্ধ্যার মুখে মাঝ সাগর থেকে দিগন্তে ভেনিসের আকাশরেখায় আলোর মালা দেখতে দেখতে – আমাদের সেই ভাসমান ভেনিস বিকেল ও সন্ধ্যা কি অপরূপ ভাবে যে কেটে গেল। আজ ভাবি সে কি বাস্তব ছিল? না আমার কল্পনা!
পৃথিবীর বুকে জীবনের কোন এক সন্ধ্যা নামা কেমন এক অনুভূতি দেয়, সারা জীবনই যেন সেই সন্ধ্যার স্মৃতি বহন করে ফিরি। মাঝে মাঝেই সেই কেমন এক ভেজা ভেজা তাজা সতেজ রোম্যান্টিক অনুভূতি আমার চেতনাকে অবশ করে দেয়, এক ভালো লাগা বোধে আক্রান্ত হই।
আপনি গন্দলা চেপে কি করলেন সে কথা কিন্তু চেপে গেলেন। একটা কথা বাড়ি গুলো সব নেতান ননা ধরা সোঁদা গন্ধ যুক্ত কি নয়? একটু ডিটেল হলে ভালো হত গন্দলা কাহিনি না হয় নাই বলতেন।
ধন্যবাদ, আমার ব্লগ পোস্ট পড়ার জন্যে। হুম, নোনা ধরা গলির মোড়ে সোঁদা গন্ধ ছিল বই কি।