রোমান সভ্যতার শুরু থেকেই রোমানরা স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ ছিল, ওরা বিশাল ও টেঁকসই স্থাপত্য তৈরি করতে ভালোবাসতো, তাই রোমানরা ইউরোপের যেখানেই গেছে, নিয়ে গেছে তাদের স্থাপত্য কুশলতা – আর রোমানদের সেই স্থাপত্য প্রেমের নিদর্শন রোমের রোমান ফোরামে এলে আজও দেখা যায় – যদিও ভগ্ন প্রাচীন দশা, কিন্তু, সেই ভগ্ন ফোরামের যে কয়েকটি থাম, তোরণ ও স্থাপত্যের কিছু অংশ হাজার বছর পরে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে – তাদের বিশালতা, দাম্ভিকতা, কারুকাজ দেখে অনেকেই হাজার বছর আগের রোমান ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার সেই সোনালি দিন গুলোকে অনুমান করে নিতে পারে।
আর রোমানদের সেই দক্ষতা অনুমানের জন্যেই বোধহয়, দেখি আমাদের সামনেই ইংল্যান্ড থেকে আগত একদল আর্কিটেকচারের ছাত্র ছাত্রী – নিজেদের মধ্যে রোমান আর্কিটেকচারের কথা আলোচনা করতে করতে নানান দিক থেকে ফটো তুলতে ব্যস্ত ওরা, সঙ্গে ওদের প্রোফেসর – বুঝিয়ে চলেছেন রোমান আর্কিটেকচারের গোঁড়ার কথা – বেশ ভালোই, ভ্রমণ ও শিক্ষা একই সঙ্গে।
শোণা যায়, এই রোমান ফোরামের বেশীর ভাগ স্থাপত্য জুলিয়াস সিজার ও অগস্টাসের সময়ে তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ে এই জায়গায় নানান রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার মধ্যে রোমান সাম্রাজ্যের বহু সমস্যার সমাধান খোঁজা হত। এই জায়গা থেকেই শুরু হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান – তবে শুধু যে আলাপ আলোচনাতেই এই জায়গার ভূমিকা ছিল তা নয়, অনেক সময় ফোরামকে ঘিরে যুদ্ধ বিগ্রহও হত।
মধ্য যুগে এই জায়গা সম্পূর্ণ মাটির নীচেই ছিল – আশেপাশের পুরনো বিল্ডিং গুলোয় স্থানীয় মানুষরা ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি রাখতো। নেপোলিয়ানের সময়ে খনন কাজের ফলে এই আশ্চর্য জায়গার রহস্য জানা যায় – রোমান সভ্যতার এক যুগকে দেখা যায়।
জানা যায় – এই ফোরামের স্থাপত্য গুলো বেশ কয়েক ধাপে তৈরি হয়েছিল – কারণ হিসাবে বলা হয় – টাইবার নদীর বন্যা যেমন দু কূল ভাসিয়ে দিত, তেমনি আশেপাশের পাহাড়ের ধস নেমে এই জায়গার উচ্চতাও বেড়ে গিয়েছিল। যখনই নতুন স্থাপত্য তৈরি হোতো পুরনোর উপরেই তৈরি হত – তাই এই জায়গায় খনন করে রোমানদের বিভিন্ন সময়ের স্থাপত্য দেখা গেছে, এমনকি আজও খননের কাজ সম্পূর্ণ হয় নি, এখনো হয়তো বহু রহস্য মাটির নীচে আছে।
আজকের পৃথিবীর মধ্যে আশ্চর্য এক জায়গা এই রোমান ফোরাম – একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক রোমের সমস্ত আধুনিকতার মধ্যেও প্রাচীন সভ্যতার ভগ্নাবশেষকে আজকের রোমবাসীরা কত সহজেই সযত্নে জায়গা দিয়েছে। চাইলে তো, আধুনিকতার জোয়ারে সমস্ত পুরনোকে সরিয়ে এক ঝাঁ চকচকে আধুনিক বিল্ডিং তৈরি করে দিতেই পারতো, কিন্তু, না, সময়ের রথে চড়ে আধুনিকতা যতই উর্ধে পাড়ি দিক না কেন, রোমানদের গৌরবের সময় যেখানে থমকে গিয়েছিল, সেই সময়ের নিদর্শনকে ধরে রাখার জন্যে আজও রোমবাসীরা আপ্রান চেষ্টা করে চলে । হাজার বছর আগের সময়ের ছাপকে এই রোমান ফোরাম বহন করে, যার টানে পৃথিবীর নানা দিকের মানুষ রোমে আসে। রোমের সেই পুরনো দিনের নিদর্শনই যে রোমের প্রধান আকর্ষণ – আজকের রোম বাসীরা সেটা ভোলে না।