ল্যুভরে মিউজিয়ামে (The Wedding Feast at Cana, Louvre, Paris )

যীশু খ্রিস্ট তার জীবনে যে সমস্ত আশ্চর্য অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তার মধ্যে Cana র বিবাহ উৎসবে জলকে ওয়াইনে পরিণত করা ছিল প্রথম অলৌকিক ঘটনা – বিবাহ অনুষ্ঠানের শেষের দিকে নিমন্ত্রিত যীশু যখন জানতে পারলেন নিমন্ত্রিতদের পরিবেশনের জন্যে ওয়াইন ফুরিয়ে গেছে, তিনি জগে জল ভরে দিতে বললেন আর সেই জলকে তিনি ওয়াইনে পরিণত করে দিলেন – আর সেই অলৌকিক ঘটনাকে ইউরোপের নানা জায়গায় নানা ভাবে আঁকা হয়েছে।

ল্যুভরে মিউজিয়ামে যে ঘরে মোনালিসা ছবিটি আছে, সেই ঘরে মোনালিসা ছবিটির ঠিক উল্টো দিকের দেওয়ালে যীশুর সেই প্রথম অলৌকিক ঘটনার বিশাল ছবি ‘The Wedding Feast at Cana’ শোভা পায়। ভেনিসের ইটালিয়ান রেনেসাঁস সময়ের চিত্রশিল্পী Paolo Veronese এর আঁকা তেলরঙের এই ছবিটি  ল্যুভরের সমস্ত চিত্র সংগ্রহের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড়। সম্পূর্ণ দেওয়াল জোড়া তেলরঙের এই ছবিটি খুব সহজেই নজর কেড়ে নেয়।

ছবিটি ভেনিসের এক বেনেডিক্ট মঠের দেওয়ালে প্রায় দু’শো বছরের উপরে ঝোলানো ছিল – অষ্টাদশ শতাব্দীতে নেপোলিয়ান ছবিটি লুট করে প্যারিস পাঠিয়ে দেয় – বিশাল এই ছবিটিকে প্যারিস পাঠাতে মাঝামাঝি করে দু’ভাগে কাটতে হয়েছিল।

ওয়ারটার্লু যুদ্ধে নেপোলিয়ান হেরে যাওয়ার পরে ইউরোপের নানা দেশ থেকে লুট করা শিল্প সামগ্রী ফ্রান্সকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল। সেই ওয়ারটার্লু যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ল্যুভরে মিউজিয়াম থেকে, নেপোলিয়ানের লুট করা বহু শিল্প সামগ্রী শিল্পের আসল দেশে বা আসল মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল – কিন্তু, এই বিশাল ছবিটি কিন্তু ল্যুভরে কর্তৃপক্ষ ইতালিকে ফিরিয়ে দেয় নি।

অবশ্য, সেই সময় নেপোলিয়ান যতটা শিল্প সামগ্রী ইউরোপের নানা দেশ থেকে লুট করেছিল, ল্যুভরে মিউজিয়াম তার মাত্র পঞ্চান্ন শতাংশ ফিরিয়ে দিয়েছিল, আর বাকি সমস্ত শিল্প সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায়। এই The Wedding Feast at Cana ছবিটিও বাক্স বন্দী করে ফ্রান্সের অন্য শহরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এমনকি, Franco-Prussian যুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এই ছবিটিকে লুটতরাজের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে গুটিয়ে নিয়ে ফ্রান্সের নানান জায়গায় সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। আর সযত্নে সুরক্ষিত যে ছিল, তা তো চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে।

বিশাল এই ছবিটি বিবাহ নিমন্ত্রণ ভিড়ের সুক্ষ ডিটেলসে পরিপূর্ণ – যীশু সহ একশো ত্রিশ জনের উপরে নানান চরিত্র, নানান স্বতন্ত্র ভঙ্গিতে ছবিতে উপস্থিত – ছবিতে সবাই ব্যস্ত নিজের কাজে, নিজের মধ্যে। ছবির ডান দিকে একজন সুদৃশ্য জগ থেকে ওয়াইন ঢালছে। ছবির একদম মাঝে যীশু বসা – আর যীশুর ঠিক পেছনে, উপরের বারান্দায় ভেড়া কাটতে ব্যস্ত কসাই, নীচে বসে দুই জন বাদ্যযন্ত্রে সুর তুলেছে – হয়তো জীবন, মৃত্যুর মধ্যে সুক্ষ ব্যবধানকে বোঝাচ্ছে, কিংবা যীশুর জীবনের শেষ পরিণতিকেও বোঝায়। আবার হয়তো বা বোঝায় – জীবনে সঙ্গীত সুর যেমন সত্য, মৃত্যুও সত্য, এক অনিবার্য সত্য।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s